অন্যদের ঠকিয়ে চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার ভাতা মেরে খাচ্ছেন সৎ ভাই

ডিসির কাছে গেল লিখিত অভিযোগ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রতারণা করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিতার ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে সৎ ভাই শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মাইজপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আহামদের সন্তান বদিউল আলম বাবুল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদনে বদিউল আলম বাবুল বলেন, ‘আমার পিতা শহীদ আকবর আহমদ সরকারি গেজেটভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি সরকার প্রণীত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তিনি অর্ন্তভূক্ত হন। যা পরবর্তীতে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমার পিতার সিরিয়াল নম্বর ১১৬, গেজেট নম্বর নম্বর ৩১৬১।’

লিখিত আবেদনে তিনি বলেন, ‘আমার পিতা শহীদ আকবর আহমদ এর দুই সংসার ছিল। প্রথম স্ত্রী (আমার মাতা) মুহছেন আরা বেগমের সংসারে আমরা তিনভাই জন্ম দেয়ার পর পরবর্তীতে তিনি মারা গেলে রশওন আরা বেগমকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন আমার পিতা। ওই সংসারে সাহাব উদ্দিন নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। দুই পরিবারের চার ছেলে সন্তানের মধ্যে আমি সবার বড়। গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে আমার পিতার নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু হলেও সৎভাই শাহাব উদ্দিন বিষয়টি গোপন রেখে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, রেশন ভাতা, উৎসব ভাতা উত্তোলন করে ফেলেন। এ ব্যাপারে শাহাব উদ্দিনের (সৎ ভাই) কাছে জানতে চাইলেও তিনি ভাতা সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন। এমতাবস্থায় ভাতা নিয়ে সৎ ভাইয়ের প্রতারণার প্রতিকার ও আমার পিতার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের সমহারে বণ্টনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা এ আবেদন করেন।’

বদিউল আলম বাবুল জানান, ‘সৎ ভাই শাহাব উদ্দিন পিতার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিয়ে আমাদের তিন ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সে আমাদের বঞ্চিত করে একাই মুক্তিযোদ্ধা পিতার ভাতার অংশ ভোগ করছে। সম্প্রতি ভাতার ব্যাপারে শাহাব উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে সে আমাকে বলে, বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় গেজেটভুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। শুধু তাই নয় বাবার নাম তালিকাভূক্ত করতে এলাকার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, তার অনুগত কিছু ব্যক্তি এমনকি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের মাধ্যমে টাকা দিতে হয়েছে।

বদিউল আলম বাবুল বলেন, আমার পিতার ভাতার টাকা দাবি করায় সৎ ভাই শাহাব উদ্দিন আমাকে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। শাহাব উদ্দিন আমাদের ঠকিয়ে রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাৎ করছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার পিতাকে গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ভাতা বরাদ্দ কমিটি আইন অনুযায়ী যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমি মেনে নেবো।’

চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু মোহাম্মদ হাজী বশিরুল আলম বলেন, চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আকবর আহামদ একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি সরকার প্রণীত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আহামদ। যা পরবর্তীতে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা কমান্ডার আবু মোহাম্মদ হাজী বশিরুল আলম বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়। তবে পিতাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য সন্তান শাহাব উদ্দিনের কিছু টাকা খরচ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আমার কাছে ফোন করা হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আমার বিস্তারিত বক্তব্য দিয়েছি।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু মোহাম্মদ হাজী বশিরুল আলম বলেন, মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা নিয়ে দ্বন্দের সৃষ্টি হলে তা মিমাংসার জন্য উপজেলা পর্যায়ে ভাতা বরাদ্দ কমিটি রয়েছে। শহীদ পরিবারের মাঝে ভাতার টাকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের ব্যাপারে উপজেলা ভাতা বরাদ্দ কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করলে তা মিমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!