অন্তিমযাত্রায়ও বাবুনগরী পাশে পেলেন আহমদ শফীকে

ফটিকছড়ির বদলে হাটহাজারীতেই দাফন সম্পন্ন

ফটিকছড়ি নয়, শেষপর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দাফন করা হল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার কবরস্থানেই। তার অন্তিম শয়ান হল হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর কবরের পাশেই।

রাত ১১টা ২০ মিনিটে জানাজা শেষে নানা নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাত পৌনে ১২টার দিকে জুনায়েদ বাবুনগরীর দাফন হল হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই। পরিবারের লোকজনের অমত থাকলেও মূলত মাদ্রাসা ছাত্রদের চাপের মুখেই তাকে হাটহাজারীতে দাফন করতে বাধ্য হন হেফাজতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা।

জুনায়েদ বাবুনগরীকে কোথায় দাফন করা হবে— এ নিয়ে শুরু থেকেই তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন হেফাজত নেতাকর্মী ও মাদ্রাসা ছাত্ররা। পরিবারের সদস্যরা তাকে ফটিকছড়ির নিজের গ্রামে দাফন করার সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা মানতে চাইছিলেন না হেফাজত নেতাকর্মী ও মাদ্রাসা ছাত্ররা। তারা বারবার দাবি জানিয়ে আসছিলেন, হেফাজত আমিরকে যেন হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই দাফন করা হয়।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী

শেষ পর্যন্ত তাকে ফটিকছড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক আ ন ম আহমদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে হুজুরের প্রথম জানাজা নামাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে ফটিকছড়ির বাবুনগর গ্রামে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। পরিবার ও স্থানীয় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

কিন্তু বিকেলেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ফটিকছড়িতে। জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে তাকে দাফন করার চেষ্টা করা হলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে লাশ নিয়ে আসা হয় হাটহাজারী মাদ্রাসায়।

অন্তিমযাত্রায়ও বাবুনগরী পাশে পেলেন আহমদ শফীকে 1

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই চিত্র বদলে যায়। মাদ্রাসাতেই বাবুনগরীর লাশ দাফনে ছাত্ররা মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ সময় হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব নেওয়া মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী লাশ ফটিকছড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ছাত্ররা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাদের অনড় অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত মাদ্রাসার কবরস্থানেই জুনাইদ বাবুনগরীকে দাফন করা হয় রাত পৌনে ১২টায়।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বেলা ১২ টার দিকে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে মারা যান।

অন্তিমযাত্রায়ও বাবুনগরী পাশে পেলেন আহমদ শফীকে 2

বাংলাদেশে নানা সময়ে আলোচিত হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের এই নেতা। তিনি সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর। শফী নেতৃত্বে থাকার সময় হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় আসে। তখন বাবুনগরী সংগঠনটির মহাসচিব ছিলেন। সেসময় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

এরপর এক পর্যায়ে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে সরকারের সখ্য গড়ে উঠেছিল এবং তা অনেক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমানও হয়েছিল। তবে শফীর মৃত্যুর ঘটনা এবং তারপর জুনায়েদ বাবুনগরীর সংগঠনটির নেতৃত্বের আসা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের একটি অংশ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। আহমদ শফীর পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ এনে একপর্যায়ে মামলাও করা হয়।

হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন জুনায়েদ বাবুনগরী। অন্যদিকে জুনায়েদ বাবুনগরী যখন নেতৃত্বে আসেন, তখন সরকারের সাথে হেফাজতে ইসলামের একধরনের দূরত্ব তৈরি হয়। সংগঠনটির নেতাদের অনেকের বক্তব্যে বিভিন্ন সময় তা উঠে এসেছে। এ বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতা হওয়ার পর সংগঠনটি সরকারের চাপের মুখে পড়ে।

নানা আলোচনা-বিতর্ক এবং সরকারের চাপের মুখে, হেফাজতের কমিটি একবার ভেঙে দিয়ে এডহক কমিটি করেছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এর মাসদুয়েক পর তিনি নিজে আমীর হয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!