অনিয়মেই ৭৭ লাখ টাকার মশার ওষুধ কিনলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, দুদক পেলো সত্যতা

নিয়ম অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে পাঁচ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করতে হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র দেওয়ার কথা। কিন্তু সে নিয়ম না মেনে কোনো দরপত্র ছাড়াই ‘পছন্দের’ ঠিকাদারের কাছ থেকে তিন দফায় কেনা হয়েছে সাড়ে ৭৭ লাখ টাকার মশার ওষুধ।

অভিযানে গিয়ে এমন অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

দুদক জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পছন্দের এই ঠিকাদার চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক অরভিন সাকিব ওরফে ইভান। ২০২২ সালের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফায় অরভিন সাকিবের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ৬ হাজার ৩৫০ লিটার মশা মারার ওষুধ কেনা হয়।

এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে কেনা হয়েছিল ৬ হাজার ৪০০ লিটার ওষুধ। মোট তিন দফা এসব ওষুধের জন্য সিটি করপোরেশনের ব্যয় হয় সাড়ে ৭৭ লাখ টাকা।

দুদক জানায়, পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে ওষুধ কেনা ‘জায়েজ’ করতে গণখাতের ক্রয়বিধির ৭৬ (ট) ধারা (পিপিআর) ব্যবহার করেছে সিটি করপোরেশন।

অথচ এই ধারা অনুযায়ী অতিজরুরি বা প্রয়োজনীয় পণ্য, কার্য এবং সেবা ক্রয় করার কথা। এর মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করা যাবে না। এ জন্য ওষুধ কেনার ব্যয় পাঁচ লাখ টাকার ওপরে না দেখানোর জন্য কয়েকটি লটে ভাগ করে কেনা হয়েছে।

দুদক বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অরভিন সাকিবের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার ২ হাজার ৯০০ লিটার ওষুধ কেনা হয় চারটি লটে ভাগ করে। প্রতি লটে ৭২৫ লিটার করে ওষুধ সরবরাহ করতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রতি লিটার ওষুধের দাম ধরা হয়েছে ৬৭৮ টাকা। এতে ৭২৫ লিটার ওষুধের দাম ৪ লাখ ৯১ হাজার ৯১২ টাকা। আগের ওষুধগুলোও এভাবে কেনা কিনা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও ছাত্রলীগ নেতা অরভিন সাকিব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন জরুরি প্রয়োজনে ওষুধ কেনার প্রস্তাব দিলে সেখানে আরও কয়েকজন ঠিকাদার ওই প্রস্তাবে কোটেশন জমা দেয়। আমিও দিয়েছি। আমার কোটেশন সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাব হওয়ায় আমাকে ওষুধ সরবরাহের অনুমতি দেয় সিটি কর্পোরেশন। আর একটা দরপত্র করতে প্রায় আড়াই থেকে তিনমাস সময় লেগে যায়। সেখানে জরুরি ভেবে ওষুধ কিনেছে সিটি কর্পোরেশন।’

দুদক অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘দুদক অভিযানে বিষয়টি আমার জানা নেই।’

অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘সম্প্রতি একটি প্রেক্ষিতে বিষয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে অভিযান পরিচালনা করি আমরা। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের গিয়ে সমস্ত নথিপত্র সংগ্রহ করে দেখছে বিনা দরপত্রে তিন দফায় মোট সাড়ে ৭৭ লাখ টাকার মশা মারার ওষুধ কিনেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। শুধু তাই নয়, একই প্রতিষ্ঠান থেকে এই ওষুধ কেনা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযানের রিপোর্টটি কমিশন বরাবর প্রতিবেদন আকারে পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এমএ/আরএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!