অনলাইনে খুঁজে প্রবাসী বাবার মৃত্যুর খবরটি জানলো ছেলে, মারা গেছেন তিনদিন আগেই

১৫ বছর ধরে তিনি কাতারপ্রবাসী। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কাছের এক স্বজন এসে তাকে ভর্তি করালেন হাসপাতালে। সেই হাসপাতালে একাকী চিকিৎসাধীন থাকার পর একসময় তিনি মারা যান। কিন্তু তিন দিনেও সেই খবর জানতে পারেননি তার দেশে থাকা স্বজনরা। কাতারের পাশের দেশ কুয়েতে আছেন ওই কাতারপ্রবাসীর একমাত্র ছেলে। তিনিও জানতেন না কিছুই। তিন দিন ধরে বাবার কোনো খোঁজ না পেয়ে কৌতূহলের বশে এক আত্মীয়কে দিয়ে বিদেশি কর্মীদের জন্য কাতার সরকারের নির্দিষ্ট অনলাইন পোর্টালে আইডি দিয়ে খোঁজ করতেই জানা গেল হাসপাতালের ঠিকানা। সেই হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল, বাবা আর নেই। তিন দিন আগে তিনি মারা গেছেন হাসপাতালেই। সেখানকার মর্গে পড়ে আছে রেমিট্যান্সযোদ্ধার প্রাণহীন শরীর।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারার চাতরী ইউনিয়নের মুহাম্মদ তসলিম উদ্দিন চৌধুরীর (৫৮) জীবনে। গত ১৫ বছর ধরে তিনি কাতারে কর্মরত ছিলেন। তিনি উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের সুজামওলা পাড়ার সোলায়মান চৌধুরীর পুত্র। প্রতিবছরই তিনি নাড়ির টানে ছুটে আসেন দেশে। গত বছর করোনা মহামারীর কারণে আসতে পারেননি দেশে।

কাতারের যে ‘মালিকের’ জন্য ১৫ বছর ধরে শ্রম দিয়ে আসছিলেন, সেই মালিকও মৃত্যুর খবরটা তো নয়ই, অসুস্থতার খবরটিও জানানোর দরকার মনে করেননি। ‘প্রবাস জীবনটাই কি এমন?’— শনিবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা সাতটায় কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলছিলেন তসলিম উদ্দিনের একমাত্র ছেলে কুয়েতপ্রবাসী আরিফুল ইসলাম।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রবাসী তসলিম উদ্দিন চৌধুরী (৫৮) কাতারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গত বুধবার (১১ আগস্ট)। কিন্তু মারা যাওয়ার তিনদিন পরও জানতে পারেননি কুয়েতপ্রবাসী তার ছেলে বা দেশে থাকা তার কোনো আত্মীয়-স্বজনও। অবশেষে কাতার সরকারের অনলাইন পোর্টালে আইডি নাম্বার দিয়ে খুঁজে জানতে পারলেন মৃত্যুর সংবাদটি। পেলেন ঠিকানা।

ছেলে কুয়েত প্রবাসী মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার আব্বা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, সেটা মাত্র জেনেছি উনার মালিকের মাধ্যমে। আমি কিছুদিন আগেও দেখে এসেছি উনাকে। দুই-এক দিন ধরে যখন কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না, তখনই আমার খালাতো বোনের স্বামীকে বিষয়টি জানাই। তিনি কাতার সরকারের অনলাইন পোর্টালে আমার আব্বার আইডি নাম্বার দিয়ে খুঁজে বের করলেন হাসপাতালের ঠিকানা। সেখানে গিয়ে চিকিৎসকরা উনাকে জানান আব্বা তিনদিন আগে মারা গেছেন। বিশ্বাস যখন হচ্ছিল না, তখনই দেখতে চাইলেন মুখ।

আরিফুল বলেন, ‘আব্বার লাশ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। বাকিটা আল্লাহ্ জানে। প্রবাসে আমাদের কোনো মূল্য নেই কারও কাছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!