অধ্যক্ষকে ‘হত্যার হুমকি’, নুরুল আজিম রনিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা খালাস

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের বেসরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন সাবেক নগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনিসহ সাত আসামী। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বিজ্ঞ মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহান শুনানি শেষে সকল ছাত্রলীগ নেতাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

খালাসপ্রাপ্ত অন্য আসামীরা হলেন মুজিবুর রহমান রাসেল, তানবীর মেহেদী মাসুদ, নেওয়াজ শরীফ অমি, আরিফুর রহমান মাসুদ, আবদুর রায়হান কিরন, নুরুল হুদা মিঠু।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ কক্ষে ঢুকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ৭ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দেয় চকবাজার থানার পুলিশ।

ওই বছর ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ চার্জশিটের সবাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।

রনি ছাড়া চার্জশিটে অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন মজিবুর রহমান রাসেল, তানভীর মেহেদি মাসুদ, নেওয়াজ শরীফ অমি, আরিফুর রহমান মাসুদ, কিরণ ও নুরুল হুদা মিঠু। এদের সকলেই মহানগর,কলেজ ও বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাত্রলীগ কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন।
অধ্যক্ষকে ‘হত্যার হুমকি’, নুরুল আজিম রনিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা খালাস 1

রনিসহ সাত নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহেদ খান ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল নগরের চকবাজার থানায় মামলাটি করেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম গত ৩১ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে তার দলবল নিয়ে হইচই শুরু করেন। তাঁর নির্দেশে তানভীর ও নেওয়াজ তাঁদের হাতে থাকা পিস্তল অধ্যক্ষের ঘাড়ে ঠেকিয়ে গুলি করতে চায়। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেন তাঁকে। প্রাণে রক্ষা পেতে কলেজের পিয়নসহ অন্যদের সহযোগিতা চাইলে নুরুল আজিম তাঁকে (অধ্যক্ষ) কিলঘুষি মারতে থাকেন।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, প্রবেশপত্রের সঙ্গে উন্নয়ন ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে আন্দোলন করেন নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা। সেদিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩১ মার্চ বাড়তি ফি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এরপর কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় ৩১ মার্চ দুপুরে নুরুল আজিম রনি আবারও ওই কলেজে যান। তখন টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে রনি ও তার কর্মীরা অধ্যক্ষকে চড়-থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে।

সে সময় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিও বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বাড়তি ফি না দিয়ে চলে যেতে চাইলে অধ্যক্ষকে অফিসে বসিয়ে রেখে টাকা আদায় করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ ২৯ মার্চ (২০১৮) আমাদের প্রতিবাদের মুখে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি হিসেবে আদায় করা বাড়তি ৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা দিয়েছিলেন। ৩১ মার্চ তার ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। সেদিন (৩১ মার্চ) অভিভাবকরা সকাল ১০টায় কলেজে গিয়েও টাকা ফেরত না পাওয়ায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের কল পেয়ে আমি কলেজে যাই। আমাকে দেখেই অধ্যক্ষ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আমরা তাকে অফিস কক্ষে বসিয়ে কথা বলি। আদায় করা বাড়তি ফি ফেরত দিতে বাধ্য করি।’

নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘আমাদের অনড় অবস্থানের কারণে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ কলেজ কর্তৃপক্ষ ১১০ থেকে ১২০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি ফি ফেরত দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ যে অন্যায়ভাবে টাকাগুলো নিয়েছিল, ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়। আমরা বাকি আরও প্রায় সাড়ে আটশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলাম।’

আইএমই/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!