সেমিনার/ ‘পরিকল্পনা ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছাড়া ভবন নয়’
চট্টগ্রামে সেমিনারে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন
গ্রাম হবে শহর। দেশ উন্নত হবে কিন্তু তা যেন হয় পরিকল্পিত। দেশে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে যার কারণ উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাব। ফায়ার ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে উঠছে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক, বিভিন্ন ধরনের কারখানা। দেশে প্রতিনিয়ত নিজ উদ্যোগে বাড়িঘর তৈরির কাজ চলছেই। স্থপতি কিংবা প্রকৌশলীদের সংশ্লিষ্টতা থাকে না অনেক ক্ষেত্রেই। ফলে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা উপেক্ষিত থাকে। তাই প্রতিটি মানুষকে আগুন থেকে নিরাপদে থাকতে এবং ভবনের সুরক্ষার জন্য আরো সচেতন হওয়া এবং অগ্নিনির্বাপন সম্পর্কিত বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে “কর্মক্ষমতা ভিত্তিক ভবনের অগ্নি সুরক্ষা” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।
শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল চারটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি), চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. হোসেন মনসুর সভাপতিত্বে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এমপি মেধাবী প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে ভবনের অগ্নি সুরক্ষাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবং সমাধানের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আগুন থেকে নিজেদের এবং ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে জনগণের মাঝে ব্যাপক হারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রকৌশলীদের অগ্রণী ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান। আমাদের বাংলাদেশকে সাজাতে হবে সাজিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা অধিকাংশ নিয়ম মানি না নিয়ম আমাদের মানতে হবে। নিয়ম মেনেই উন্নত দেশে পরিণত করতে হবে।
সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (বিএসএমআরডিইউবি)-এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মুনাজ আহমেদ নুর।
মূল প্রবন্ধকার অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মুনাজ আহমেদ নুর তার প্রবন্ধে আগুন থেকে ভবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিভাবে ভবনকে আগুন থেকে নিরাপদ রাখা ও সুরক্ষা দেয়া যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছেন।
প্রবন্ধকার ভবনের প্রকৌশলগত বিষয়গুলোকে অবহেলা না করা, যেমন কোথায় সিঁড়ি হবে, আগুন লাগলে কোন পথ দিয়ে কিভাবে নিরাপদে বের হবে তা বিবেচনায় নেয়া। নিরাপত্তার খাতিরে দমকল বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া এবং সেগুলো ব্যবহার বিধি জেনে নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ভবন তৈরি এখন বেশি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার কারণে সতর্ক থাকা ও যথাযথ পেশাজীবীদের সহায়তা গ্রহণেরও পরামর্শ দেন।
প্রবন্ধে আবাসিক ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে আইন অনুসরণ করে ভবন নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়াও ভবন থেকে বেরিয়ে আসার পথ অর্থাৎ আগুন লাগলে মানুষ যাতে বেরিয়ে আসতে পারে সেটি নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
প্রবন্ধকার ভবনের উচ্চতা ও প্রধান সড়কের প্রশস্ততা এবং প্লটের অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংক্রান্ত সব প্লট ও ভবনের প্রবেশ পথ থাকা, স্বয়ংক্রিয় স্প্রিংকলার স্থাপন, স্থায়ী অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার জন্য ন্যুনতম ৫০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রাখা, রিজার্ভার থেকে পানি যাতে নেয়া যায় সেজন্য ড্রাইভওয়ে রাখা, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ এবং এটি অগ্নি নিরোধক সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা, স্মোক ও হিট ডিটেক্টশন সিস্টেম সব স্মোক ও হিট ডিটেক্টর ও এয়ার ডাম্পার এর অবস্থান নকশায় চিহ্নিত করা, ইমারজেন্সি লাইট, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফ্লোর প্ল্যানে বিকল্প সিঁড়ি রাখা, রিফিউজ এরিয়া অর্থাৎ আগুন, তাপ ও ধোঁয়ামুক্ত নিরাপদ এলাকা সৃষ্টিসহ রান্নাঘরে চুলার আগুন নির্বাপনের জন্য ওয়েট কেমিক্যাল সিস্টেম রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের হৃদপিন্ড। চট্টগ্রাম আয় করে আর সারা বাংলাদেশ চট্টগ্রামের মাধ্যমে আয়কৃত টাকা খরচ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য বেশকিছু মেগা প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন এবং আরো কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। সারা চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ও গড়ে উঠা কারখানার অগ্নি সুরক্ষার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সভাপতি এ ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রকৌশলীসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
মূল প্রবন্ধকারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন প্রকৌশলী এসএম শহিদুল আলম। সেমিনারে আইইবির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও রাজউকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম নুরুল হুদা, আইইবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো: নুরুজ্জামান, ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী আবুল কালাম হাজারীসহ আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল আলম, ভাইস-চেয়ারম্যান (একা) প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, ভাইস-চেয়ারম্যান (এডমিন) প্রকৌশলী প্রবীর কুমার দে, সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম. আলী আশরাফ, পিইঞ্জ, প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন, প্রাক্তন-ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, প্রকৌশলী এম.এ.রশীদ, প্রকৌশলী উদয় শেখর দত্ত এবং আইইবির নেতৃবৃন্দ ও চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রচুর সংখক প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্নের জবাব দেন মূল প্রবন্ধকার ও সেমিনারের সভাপতি।
সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন,বাংলাদেশ (আইইবি)-এর প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর।