৯ দিনে ৯৬৮ কোটি তুলে নেন এস আলমের ভাগ্নে, ভুয়া দুই কোম্পানির নামে আরও ২২০০ কোটি লোপাট
ইসলামী ব্যাংকের ২৩ কর্মকর্তাকে ডেকেছে দুদক
ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা মেরে দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ভাগ্নেসহ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ২৩ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ১০, ১১ ও ১২ নভেম্বর দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে তাদের।
অভিযুক্তদের অন্যতম হলেন সাইফুল আলম মাসুদের খালাতো বোনের ছেলে গোলাম সারওয়ার চৌধুরী মুরাদ। তার একার নামেই আছে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ। মামা-ভাগ্নে মিলে ওই টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মুরাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নে। তিনি আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্যও। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার আগে মুরাদ টাকার বিনিময়ে জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতেও তদবির চালিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দুদকের উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতের পাঠানো এক তলবি চিঠিতে দুদকে হাজির হওয়ার সময়, উল্লেখিত কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম সারওয়ার চৌধুরী মুরাদ, জুবলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস’সহ অন্যান্যরা ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ ক্ষেত্রে ঋণ প্রস্তাবনা, সুপারিশ, অনুমোদন, বিতরণ, পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই ২৩ কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা মনিটরিং বিভাগের প্রধান এসভিপি খালেকুজ্জামান, একই বিভাগের এসএভিপি মোহম্মদ নজরুল ইসলাম, বিনিয়োগ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাব্বির, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ উল্লাহ, মোহাম্মদ আলী, ফরিদ উদ্দিন ও সাইদ উল্লাহকে আগামী ১০ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরী, এএএম হাবিবুর রহমান, হাসনে আলম, আব্দুল জাব্বার, সিদ্দিকুর রহমান, কাজী মো. রেজাউল করীম, মিফতাহ উদ্দিন ও বিনিয়োগ কমিটির সদস্য আবু সৈয়দ মোহম্মদ ইদ্রিসকে ১১ নভেম্বর তলব করা হয়েছে।
আগামী ১২ নভেম্বর তলব করা অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন—অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আলী ও ওমর ফারুক খান, এএফএম কামালুদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, জেকিউএম হাবিবুল্লাহ এবং আলতাফ হোসাইন ও গিয়াস উদ্দিন কাদের।
ঋণসংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের ১৫০০/১। এই গ্রাহককে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২৪০ কোটি টাকা, ৭ ডিসেম্বর ১১০ কোটি টাকা, ১১ ডিসেম্বর ১৩০ কোটি টাকা, ১২ ডিসেম্বর ১২০ কোটি টাকা, ১৩ ডিসেম্বর ১৩০ কোটি টাকা, ১৪ ডিসেম্বর ১২০ কোটি টাকা ও ১৫ ডিসেম্বর ১১৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়। মুনাফাসহ এ ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫৪ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদের ভাগ্নে গোলাম সারওয়ার চৌধুরী মুরাদ।
ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের ঠিকানা চট্টগ্রামের কোতোয়ালীর ৪০ আছদগঞ্জ। এই গ্রাহককে গত বছরের ১৮ থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মাত্র ১১ দিনে দেওয়া হয় ৯৫৯ কোটি টাকা। নথিপত্রে মুনাফাসহ এ ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৮৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ঠিকানা হাটহাজারীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী। এই গ্রাহককে সব মিলিয়ে এক হাজার ১১৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে ঋণ ও ঋণ সুবিধা মিলিয়ে দেওয়া হয় ৫৭৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থ দেওয়া হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।