৯ কোটি টাকার কোকেনকাণ্ডে ছিলেন নূর মোহাম্মদ-মোস্তাকও

র‌্যাবের চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে ১০ জনের নাম

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জব্দকৃত ৯ কোটি টাকা মূল্যের কোকেন চোরাচালানের বহুল আলোচিত মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক দুই সহোদর নূর মোহাম্মদ ও মোস্তাক আহমদসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব। ২৯ জুন মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেন র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আলোচিত কোকেন চোরাচালান মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে র‌্যাব। বিস্তারিত আগামীকাল জানা যাবে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তে নূর মোহাম্মদ ও মোস্তাক আহমদকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। আদালত তা আমলে নিয়ে র‌্যাবকে অধিকতর তদন্ত করার আদেশ দেন। র‌্যাবের তদন্তে নূর মোহাম্মদ ও মোস্তাক আহমদের নামও যুক্ত হয়ে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাবের দাখিল করা অভিযোগপত্রে ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জের খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তাফা, আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফা কামাল, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক একে আজাদ, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল আলম, লন্ডনপ্রবাসী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজারের বকুল মিয়া এবং খানজাহান আলী লিমিটেডের পরিচালক মোস্তাক আহমদ।

প্রথম সাতজন বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে কারাভোগ করেছেন। জামিনে গিয়ে পলাতক আছেন নূর মোহাম্মদ। তবে শেষ তিনজন শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, কোকেনের চালানটি উরুগুয়ের মন্টেভিডিও থেকে জাহাজীকরণ করা হয়। পরে তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। বাংলাদেশ এর আগে কখনোই বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী ভোজ্যতেল আমদানি করেনি। তাছাড়া তরল কোকেনকে গুঁড়া বা পাউডার কোকেনে রূপান্তর করার মতো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নেই। ধারণা করা হচ্ছে চালানটি পাশ্ববর্তী কোনো দেশে নেওয়ার জন্যই বাংলাদেশে আনা হয়েছিল রুট হিসেবে।

এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গণি বাদি হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ১(খ) ও ৩৩ (১)/২৫ ধারায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও তার ভাই খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে চোরাচালান সংক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (বি) ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।

একই বছরের ১৯ নভেম্বরে কোকেন আমদানির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজামান (বর্তমানে অতিরিক্ত উপকমিশনার, প্রসিকিউশন) চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত দুজনসহ মোট আটজনকে আসামি করা হয়। তবে এজাহারে নাম থাকলেও কোকেনের চালানটি যে প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দরে আনা হয়েছিল, সেই খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পান তার ভাই মোস্তাক আহমেদও।

রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তির মূখে আদালত র‌্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলে র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা এসপি মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী তদন্ত শেষে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দিলেন। কোকেনের চালানটি চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে র‌্যাব-৭ ধ্বংস করে।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!