৮ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য ছাড়িয়ে নিয়ে গেল ঢাকার কোম্পানি

বিদ্যুৎ প্লান্টের নামে আনা হয়েছিল অন্য পণ্য

চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিশেষ এসআরও সুবিধার অপব্যবহার করে ৮ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মিথ্যা কোড ও উপকরণ ঘোষণা দিয়ে আমদানি পর্যায়ে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে সরকার কর রেয়াতের সুবিধা দিয়ে থাকে। মিথ্যা ঘোষণা ও বিশেষ কৌশলে নির্দিষ্ট পণ্যের বদলে করযোগ্য পণ্য এনে অনেক ব্যবসায়ী কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল নরেনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড চীন থেকে ৮ লাখ ৩১ হাজার ১৪৯ ডলারের পণ্য আমদানি করে পটুয়াখালীর বিদ্যুৎ প্লান্টের নামে।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ওই পণ্যের একটি চালান খালাসের প্রক্রিয়া চলাকালে জানা গেছে, চালানে কাস্টমসের এসআরও সুবিধা পাবে না এমন পণ্যও রয়েছে। কিন্তু কাস্টমসের রাজস্ব পরিশোধ না করেই এসআরও সুবিধার অবৈধ ব্যবহার করে এসব পণ্য খালাসের পর্যায়ে রয়েছে। অথচ চালানের সঠিক এসেসমেন্ট করা গেলে প্রায় ৮ কোটি টাকা রাজস্ব পেতো কাস্টমস।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর বিদ্যুৎ প্লান্টের নামে চীনের উয়ানবাও ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি মাদার ভেসেল এমভি সুফিয়ায় করে ওই মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠায়। চালানটি খালাসের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সিএন্ডএফ এজেন্ট মা ট্রেডিং আমদানিকারকের প্রতিনিধি হিসেবে কাস্টমসের বিল অব এন্ট্রি (সি নং ১৭৫৯৬৬৫) দাখিল করে। এতে আর্টিক্যাল অব সিমেন্ট, কনক্রিট বা আর্টিফিসিয়াল স্টোন, পাইপ পাইল আনার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এসআরওর শর্তে ওই চালান খালাসের জন্য আবেদন করে সিএন্ডএফ। কিন্তু দেখা গেছে, ওই চালানে এমন পণ্য রয়েছে যা এসআরও সুবিধা পায় না।

সরকারি বিধিমালায় বলা আছে, বৈদ্যুতিক প্লান্টে মূল ইক্যুইপমেন্ট ছাড়া আর কোন পণ্য এসআরও সুবিধা পাবে না। শর্তে সব ধারা উপ-ধারায় বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে। কিন্তু আইনের অপব্যবহার করে চলছে রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে চলতি বছরের গত ৫ মার্চ। এতে ১৯টি পণ্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেগুলো এসআরও সুবিধা পাবে না। এর মধ্যে রয়েছে স্টিল শিট, স্টিল রড, স্টিল পাইপ, সব ধরনের সিমেন্ট, বোল্ডার স্টোন, বৈদ্যুতিক লাইট-ফিটিংস, ট্রান্সমিশন টাওয়ার, ক্যাবল, সকল প্রকার বিতরণ ট্রান্সফরমার, রং, গৃহস্থালি সামগ্রী, রাসায়নিক, লুব্রিকেটিং, অয়েল, আসবাবপত্র, অফিসিয়াল সরঞ্জাম, এয়ারকন্ডিশন, ড্রেজার, অ্যাংকর বোট ইত্যাদি।

৮ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া চালানটির ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএন্ডএফ এজেন্ট মা ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী সারওয়ার ইশান জিয়া বলেন, ‘চালানটি খালাসের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয়ন এনেছি। এ প্রত্যয়নের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস চালানটি খালাসের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার রিয়াদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর আমরা অনেক যাচাইবাছাই করেছি। আমরা চালানটি দ্রুত খালাস না দিয়ে একটু দেখে শুনে খালাস দেওয়ার চেষ্টায় ছিলাম। তবে সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়ন নিয়ে আসায় আমরাও ছাড় দিয়েছি।’

এসআরও শর্তের অপব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এক সিএন্ডএফ অপর সিএন্ডএফের বিরুদ্ধে ভুল বোঝায়। কাজ না পেলে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। এগুলো সব সময় সত্য হয় না।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!