৬৮ বছরেও স্বীকৃতি পাননি রাঙ্গুনিয়ার ভাষাসৈনিক

ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা অর্জনের মাস। বারবার বাঙালি চেতনায় ফিরে আসে অমর একুশ। একুশে ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে আজ স্বীকৃত। সেদিন স্মরণ করা হয় আমাদের ভাষা শহীদদের, আলোচনায় আসে ভাষা শহীদদের গল্পগাঁথা। বায়ান্নর এ দিনটিতে ৬৮ পা রাখলেও আজও স্বীকৃতি পাননি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক আবুল কালাম।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগানে প্রথম মিছিল বের হয় রাঙ্গুনিয়ার মরিয়ম নগর থেকে। এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন ভাষাসৈনিক আবুল কালাম। মিছিলে অংশগ্রহণ করেন ৭০-৮০ জন লোক। মিছিলটি মরিয়ন নগরের বেয়ানবাজার থেকে বের হয়ে কাপ্তাই সড়কের চৌমহনী পৌঁছলে তৎকালীন পাকিস্তানের অনুগতরা রাষ্ট্রভাষা উর্দু চাই স্লোগান দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন ভাষাসৈনিক আবুল কালাম। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার খবর পেয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে শতাধিক মানুষ মাইজপাড়া থেকে নুর জাহান বালিকা বিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভা করেন।এ সভায় আহত সৈয়দ আবুল কালামের পিতা মাওলানা সৈয়দ আবদুল হক তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

যেভাবে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন
ভাষাসৈনিক আবুল কালাম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনের চরম মুহূর্তে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনসভা ও প্রতিবাদ সভায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। প্রতিবাদ সভায় বলিষ্ট বক্তব্যের কারণে সেসময় ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের নজরে আসেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে উত্তর চট্টগ্রামের পটিয়া, হাটহাজারী ও চট্টগ্রামের কমিটির সাথে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিজ গ্রাম মরিয়ম নগরেও ভাষা আন্দোলন কমিটি গঠন এবং সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

আবুল কালামের পরিচিতি
রাঙ্গুনিয়ার মরিয়ম নগর গ্রামে ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন ভাষাসৈনিক সৈয়দ আবুল কালাম। পিতা মাওলানা সৈয়দ আবদুল হক ছিলেন একজন আলেম। তাঁর বাল্য শিক্ষা শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ায়। তিনি ১৯৫০ সালে রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) এবং ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে আইএ (এইচএসসি) পাস করেন। ১৯৫৪ সালে বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে চাকরি নেন। ১৯৮৫ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্বেচ্ছায় অবসরে যান আবুল কালাম। ১৯৯২ সালের ১৯ জুন ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান এ ভাষাসৈনিক।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি কমান্ডার খায়রুল বশর মুন্সি বলেন, ‘ভাষাসৈনিক আবুল কালামকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাধারণ সম্পাদক কমান্ডার রাজু বড়ুয়া বলেন, ‘ভাষাসৈনিক আবুল কালাম বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড়। শুনেছি, তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে ৬ দফা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে আবুল কালামের কর্মের স্বীকৃতি দিবেন বলে আশা করছি।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm