চট্টগ্রামের ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ৮০০ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাস্ট (সিইআইটিসি) ম্যানেজিং ট্রাস্টি প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানায় দায়ের করা মামলায় ডা. রবিউলসহ আরও যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন— মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম খান এবং কাজী মো. অহিদুল আলম। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশ করে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগের পাশাপাশি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুয়া সভা করে মিথ্যা রেজুলেশন তৈরিসহ নানা চলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাস্টের (সিইআইটিসি) চেয়ারম্যান এমএ মালেক বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এমএ মালেক দৈনিক আজাদীর সম্পাদক। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রফেসর রবিউল হোসাইন সিইআইটিসির ম্যানেজিং ট্রাস্টি হিসেবে ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের (আইএইচএল) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিয়ম অনুযায়ী সিইআইটিসির আর্টিকেলস্ অব এসোসিয়েশন মতে কোম্পানির বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ৫১ ভাগ ডাইরেক্টর্স চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাস্ট (সিইআইটিসি) থেকে মনোনীতদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী সিইআইটিসি কর্তৃক মনোনীত ডিরেক্টর ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০১ সাল থেকে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ইমপেরিয়াল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্ব পালনকালে নানা ধরনের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে প্রফেসর রবিউল হোসাইন কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর চিটাগাং আই ইনফার্মারি এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স (সিইআইটিসি) ট্রাস্টি বোর্ডের ৮৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ওয়াহিদ মালেককে প্রফেসর রবিউল হোসাইনের স্থলাভিষিক্ত করে ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের (আইএইচএল) ডাইরেক্টর ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওয়াহিদ মালেকসহ নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেয়ার পর কোটি কোটি টাকার অনিয়মের চিত্রটি ধরা পড়ে।
অভিযোগে জানা গেছে, প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন হসপিটালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে আরও কয়েকজনের যোগসাজসে ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ৪৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লোকসান দেখান এবং ৪০০ কোটি টাকার ব্যাংক দায় সৃষ্টি করেন। ইমপেরিয়াল হসপিটালের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং অন্যান্য ডাইরেক্টররা এ ব্যাপারে প্রফেসর রবিউল হোসাইনের কাছে কৈফিয়ত ও হিসাব তলব করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বিপুল অংকের এই অর্থের গরমিল ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে চিটাগাং আই ইনফার্মারি এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাস্টের (সিইআইটিসি) বোর্ড সভার নামে গোঁজামিলেরও আশ্রয় নেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টির সভা পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি হিসেবে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে সভা আহ্বান করে থাকেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর তিনি চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে সিইআইটিসি ট্রাস্টি বোর্ডের ৯০তম সভা আহবান করেন। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার ভিত্তিতে সভা আহ্বান করার জন্য তিনি ১১ ডিসেম্বর নোটিশ দেন। ওই নোটিশে ছয়টি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছিল এবং সাত নম্বর এজেন্ডায় ‘চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্যান্য বিষয়, যদি থাকে’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। নির্দিষ্ট দিনে সকাল সাড়ে ১০টায় সিইআইটিসি ট্রাস্টি বোর্ডের ৯০তম সভা প্রতিষ্ঠানের সম্মেলন কক্ষে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এমএ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। যথারীতি সুনির্দিষ্ট ছয় এজেন্ডার মধ্যে ১ম থেকে ৫ম এজেন্ডা পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬ষ্ঠতম এজেন্ডায় প্রফেসর ড. রবিউল হোসাইনের ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের বোর্ড থেকে পদত্যাগের বিষয় ধার্য ছিল। সভায় উক্ত এজেন্ডার ওপর আলোচনাকালে সভার সভাপতি তাকে মৌখিকভাবে বক্তব্য উপস্থাপন না করে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র দাখিল করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে প্রফেসর ডা. রবিউল হোসেন মারমুখী আচরণ শুরু করেন। তিনি লিখিত পদত্যাগপত্র দাখিল না করার কারণে ওই এজেন্ডাটি পরবর্তী সময়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলে সভাপতি মিটিং মুলতবি ঘোষণা করেন। বৈঠকের সভাপতি এম এ মালেক এবং অপরাপর ৪জন বোর্ড সদস্য ডা. কাজী মো. অহিদুল আলম, প্রফেসর ডা. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এবং শওকত হোসেনসহ মিটিং রুম ত্যাগ করে চলে আসেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আশ্চর্যজনকভাবে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাত্র দুজন সদস্যকে নিয়ে প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন পার্সোনাল রুমে ‘মিটিং চলমান’ দেখিয়ে নিয়মবহির্ভূত ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অপকর্ম থেকে নিজেকে দায়মুক্ত রাখার লক্ষ্যে অপরাপর আসামিদের নিয়ে পারস্পরিক যোগসাজশে নানা প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের আশ্রয় নেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ট্রাস্টের বিধিবদ্ধ চেয়ারম্যান কর্তৃক সভার কার্যক্রম মুলতবি করার পর তিনি সভার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন না বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।