৭ বছর ধরেই কালারপোল সেতুর কাজ, দুই পাড়ের ভরসা এখন নৌকা

নির্মাণকাজে বছর বছর বরাদ্দ, বদলে যায় ঠিকাদারও

0

প্রায় ৭ বছর ধরেই চলছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিকলবাহা খালের ওপর নির্মিত কালারপোল (আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু) সেতুর নির্মাণকাজ। সেতুর গার্ডারের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙ্গে পড়েছে তিনটি গার্ডার। কাজও রয়েছে বন্ধ। বর্তমানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নতুন করে শুরু হয়েছে। সেতুটির দুই পাড়ের কর্ণফুলী-পটিয়ার মানুষের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা।

সেতুটির নির্মাণকাজে একের পর এক বরাদ্দ হওয়ার সাথে-সাথে বদলে যায় ঠিকাদারও। সর্বশেষ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জাকির এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। এর আগে সেতুটির নির্মাণ কাজ ছিল রানা বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্স নামে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাদের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেয় জাকির এন্টারপ্রাইজ নামের এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় ৫৭০ ফুট প্রস্থ ও ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটির একাংশ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এরপর নতুনভাবে সেতু নির্মাণের জন্য প্রথমবার ২২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সেতু মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর কাজ বন্ধ করে চলে যায়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালে এটি ২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় নতুনভাবে বরাদ্দ দেয় সেতু মন্ত্রাণালয়। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে নির্মিত সেতুটি তৎকালীন সময়ে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধন করেন।

s alam president – mobile

৭ বছর ধরেই কালারপোল সেতুর কাজ, দুই পাড়ের ভরসা এখন নৌকা 1

সেতুটির নির্মাণকাজে এমন হেলাফেলার মধ্যেই গত শুক্রবার (২৫ জুন) রাত আটটায় পিলারের ওপর ক্রেনের মাধ্যমে স্থাপিত তিনটি গার্ডার ভেঙ্গে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয় নানান ক্ষোভ। এ সময় সেতুর কাজে নিয়োজিত তিনজন শ্রমিক গুরুত্বর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। আহতরা হলেন মোহাম্মদ রবিউল (৩০), মোহাম্মদ মফিজ (২৮) ও ফেরদৌস (৪০)। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় নৌকার মাঝি মোহাম্মদ সেলিম (৫৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘৭-৮ বছর ধরে দেখে আসছি, সেতুর কাজ চলছে। তবে কী কাজ চলছে তা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। কাজ একটু করে কয়েক মাস বন্ধ রেখে চলে যায়। নয়তো ভেঙ্গে যায় সেতুর গার্ডার বা অন্যান্য সমস্যা। সেতুর নির্মাণকাজ ধীরগতিতে চললেও কখনও কাউকে এসে দেখতে বা তদারকি করতে দেখিনি আমরা।’

Yakub Group

ওই মাঝি আরও বলেন, ‘তবে যতদিন ধীরগতিতে কাজ চলবে, ততদিন চোরদেরও লাভ, আমাদেরও লাভ। আমরা চালাতে পারব নৌকা। সেতু হয়ে গেলে তো আর মানুষ নৌকায় উঠবে না।’

শনিবার (২৬ জুন) সকালে সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা জানা যায়, কালারপোল সেতুটি ১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়। এটি ২০০৭ সালের ১৮ নভেম্বর এস আলম কোল্ড স্টিলের টিনের কয়েল বোঝাইকারী বার্জ এমভি সানলাইট কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সেতুটির তৃতীয় ও চতুর্থ স্পেনটি নদীতে নিমজ্জিত হয়। সেতুটি কাজের উদ্বোধন হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একটি পুরাতন স্প্যানের ওপর সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য একটি বেইলি ব্রিজ তৈরি করে দেয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বছরখানেক সেতুটির কাজ করার পর তাদের প্রতিষ্ঠানের লোকসান দেখিয়ে কাজ ফেলে চলে যায়।

এভাবে দীর্ঘসময় ধরে ধীরগতিতে নির্মাণ কাজ চলায় ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। এখনও পর্যন্ত সেতুর গার্ডারের কাজ শেষ হয়নি। তার আগেই গত শুক্রবার ভেঙ্গে পড়েছে তিনটি গার্ডার। কাজও রয়েছে বন্ধ। বর্তমানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নতুন করে শুরু হয়েছে। সেতুটির দুই পাড়ের কর্ণফুলী- পটিয়ার মানুষের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা।

তবে কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি দাবি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (দোহাজারী) নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, ‘হাইড্রোলিক জ্যাকের (ক্রেন) মাধ্যমে গার্ডার বসানোর সময় জ্যাকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এরপর গার্ডার পড়ে যায়। একটি গার্ডার থেকে আরেকটির দূরত্ব দুই মিটার। একেকটি গার্ডারের ওজন ৩৫ টন। যে কারণে একটির ধাক্কায় আরেকটি- এভাবে তিনটি গার্ডার পড়ে যায়। এটি আসলে নিছক দুর্ঘটনা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজ খরচে আবার গার্ডারগুলো স্থাপন করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, কেন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা আগামী তিনদিনের মধ্যে লিখিতভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানানোর জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুটির প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকৌশলী সুমন সিংহ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!