৭০ টাকায় চিকিৎসা মেলে পটিয়ার এই ডায়াবেটিক হাসপাতালে

দেশে উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ডায়াবেটিক হাসপাতাল

ডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোনো ডায়াবেটিসের রোগী নেই। ব্যতিক্রম নয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়ও। তবে পটিয়া ও এর আশেপাশের ডায়াবেটিস রোগীরা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সহজে এবং স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পেয়ে আসছে গত ১৯ বছর ধরে। পটিয়া ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালিত ‘পটিয়া ডায়াবেটিস হাসপাতাল’ মাত্র ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসাসেবা দিয়ে এই সুযোগ করে দিয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।

দক্ষিণ চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি যে ক’টি হাসপাতাল রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সে চিন্তা থেকেই শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পটিয়ার কয়েকজন সমাজসেবক মিলে পৌরসভার বিওসি রোডে ২০০১ গড়ে তুলেন দেশে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম পটিয়া ডায়াবেটিস হাসপাতাল। হাসপাতালটির অন্যতম উদ্যোক্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমদ। বর্তমানে তিনি এই হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বে রয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ জন ডায়াবেটিস রোগী কম খরচে চিকিৎসাসেবা সেবা নেয়। যদিও সময়ের ব্যবধানে এ হাসপাতালে রোগীদের ভীড় বাড়ছে। হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। শুক্রবার ব্যতিত সপ্তাহের অন্যদিন বিশেষজ্ঞ ডায়াবেটিক চিকিৎসক দিবাকর বড়ুয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের খালিপেটে বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হয় বলেই সকাল হতে না হতেই হাসপাতাল পরিপূর্ণ হয়ে যায় রোগীদের পদচারনায়। প্রতিদিন দুজন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। ১৫ জনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি দল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে টিন সেটের দুইটি ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। হাসপাতালের যে সক্ষমতা তার চেয়েও বেশি রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে। এজন্য মাঝেমধ্যে হিমশিমও খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এ হাসপাতালে খালিপেটে-ভরাপেটে ব্লাড সুগার, রেনডম ব্লাড সুগার, সিরাম কোলেস্টেরল, সিরাম বিলিরুবিন, লিপিড প্রোপাইলসহ ডায়াবেটিস রোগীদের অন্তত ১৫টি পরীক্ষা করা হয় খুব কম খরচে।

কথা হয় পারভীন আকতার নামের বয়োবৃদ্ধ এক রোগীর সাথে। তিনি জানান গত ১০ বছর ধরে এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কম খরচে ভালো সেবা পান এখানে। আবদুল মান্নান নামের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আরেক রোগী বলেন, ‌’আমি চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা গ্রাম থেকে এ হাসপাতালে সেবা নিতে এসেছি। বিগত ৫-৬ বছর ধরে এ হাসপাতালে আসা যাওয়া করি।’

হাসপাতালের পরিচালক আবু ওবায়দা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ে শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। প্রতিদিন এ হাসপাতালে শতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। শুধু পটিয়া থেকে নয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কর্ণফুলী, বোয়ালখালী থেকেও এখানে রোগীরা আসেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক কম। যার কারনে মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্তরা এখানে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যেখানে বাইরের হাসপাতাল কিংবা প্যাথলজিতে ডায়াবেটিস রোগীদের পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকার চেয়ে বেশি খরচ হয় সেখানে আমাদের হাসপাতালে ৭০-১০০ টাকায় সেসব পরীক্ষা করানো হয়। এছাড়াও গরীব ও দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দেয়া হয়।’

হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌’বর্তমানে টিন সেটের দুটি ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এখানে শুধুমাত্র পটিয়ার রোগীরা সেবা নিচ্ছেন তা নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় থেকে এখানে রোগীরা আসেন। তাই রোগীদের বিষয়টি বিবেচনায় রেগে হাসপাতালের কার্যক্রম বৃহৎ পরিসরে করার চিন্তায় রয়েছে আমাদের। হাসপাতালের জায়গায় একটি ১২তলা ভবন করার পরিকল্পনা আছে। যেখানে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগ দুটিই রাখা হবে।’

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!