৬ বন্ধুকে দিয়ে চট্টগ্রামের গার্মেন্টসকর্মীকে ধর্ষণ করালেন স্বামী

তালাকের রাস্তা বানাতে পুরো ঘটনাই ঘটে স্বামীর পরিকল্পনায়

চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ওই নারী। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে যান হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি পৌঁছার আগে পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা একদল দুর্বৃত্ত তাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে স্বামী নিজেও তাকে অন্যদের সামনে ধর্ষণ করেন। পুরো ঘটনাটিই ঘটে স্বামীর পরিকল্পনায়। অথচ ওই নারীর সঙ্গে ছিল তার ১৬ মাস বয়সী শিশুকন্যাও।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপের ঘাটের পূর্ব দিকে মেঘনা নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে। ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণী বুধবার (৪ আগস্ট) সকালে নিঝুম দ্বীপ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করার পর ওই তরুণীর স্বামীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) তিনি চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়ায় যান। এরপর তিনি বিকেলে হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপে তার স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে ছিল দেড় বছরের শিশুকন্যাও। পথে মুঠোফোনে স্বামীর সঙ্গে একাধিকবার কথাও বলেন তিনি।

৬ বন্ধুকে দিয়ে চট্টগ্রামের গার্মেন্টসকর্মীকে ধর্ষণ করালেন স্বামী 1

ওই তরুণী বলেন, সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটার দিকে তিনি নিঝুম দ্বীপের ঘাটে পৌঁছান। এরপর ভাড়ায় চালিত একটি মোটরসাইকেলে ওঠেন। ওই মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া আরও একজন পুরুষ যাত্রী ছিলেন। তারা তাকে নিঝুম দ্বীপের মোক্তারিয়ার ঘাট থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পূর্ব দিকে নদীর তীরে নিয়ে যান। তারা কাপড় দিয়ে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে গভীর রাত পর্যন্ত সাতজন তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তার স্বামীও সেখানে এসে হাজির হন এবং বাকিদের সামনে তাকে ধর্ষণ করেন।

ওই তরুণী ও তার স্বামী দুজনেরই এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। চার বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে থেকে দ্বিতীয় এই স্বামী তাকে তালাক দেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছিলেন। ওই তরুণীর কাছ থেকে তালাক নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপও দিতে থাকেন স্বামী। কিন্তু তাতে তিনি রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত ছিলেন স্বামী। পরে তার আসার খবর পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে পথে ওঁৎ পেতে থাকেন স্বামী। ওই নারী ধারণা করছেন, তাকে তালাক দেওয়ার রাস্তা তৈরি করতেই স্বামীর পরিকল্পনায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।

হাতিয়া থানার পুলিশ জানায়, বুধবার (৪ আগস্ট) সকালে ভুক্তভোগী তরুণী নিঝুম দ্বীপ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ঘটনাটি মৌখিকভাবে অবহিত করেন। বিষয়টি জানার পর জেলা পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে বেলা দুইটা পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

ওই নারীর স্বামী রোহিঙ্গা সোহেল ছাড়াও গ্রেপ্তার অপর তিনজন হলেন নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে কলোনির মো. আক্তার (২৭), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বান্দাখালীর মাকছুদুল হকের ছেলে মো. হক সাব (৩৪) এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে কলোনির সাইদুল হকের ছেলে রাশেদ মাঝি (৪২)।

এ ঘটনায় স্বামীসহ সাতজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে হাতিয়া থানায় মামলা হয়েছে।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীকে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!