৬ কোটি ইট পড়ে আছে চট্টগ্রামের ৪০৫ ভাটায়, কেনার লোক নেই

করোনার কোপে ৭০ ভাগ ইটভাটা বন্ধ হওয়ার জোগাড়

চট্টগ্রামে ১২ কোটি ইট উৎপাদন হয়েছে গত মৌসুমে। কিন্তু বিক্রি হয়েছে তার অর্ধেক— ৬ কোটি। আরও ৬ কোটি ইট পড়ে রয়েছে ইটভাটাগুলোতে। করোনার কারণে অন্তত ৭ মাস সরকারি বা বেসরকারি কোনো ধরনের উন্নয়ন কাজ না চলায় পথে বসতে চলেছে ইটভাটার মালিকরা। এ কারণে আগামী মৌসুমে প্রায় ৭০ ভাগ ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন মালিকরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চট্টগ্রামে ৪০৫টি ইট ভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা থেকে উৎপাদন হয় ১২ কোটি পিস ইট। তবে করোনার কারণে দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় এসব ইটভাটায় প্রস্তুত করা প্রায় ৬ কোটি পিস ইট অবিক্রিত থেকে গেছে।

চট্টগ্রামে ৪০৫টি ইটভাটার মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় ৮৯টি, সাতকানিয়ায় ৬২টি, হাটহাজারীতে ৬০টি, ফটিকছড়িতে ৫১টি, রাউজানে ৪৫টি, চন্দনাইশে ৩১টি, লোহাগাড়ায় ২৫টি, মিরসরাইয়ে ১৪টি, কর্ণফুলীতে ১২টি, বোয়ালখালীতে ৮টি, পটিয়ায় ৫টি, আনোয়ারা ৪টি, সন্দ্বীপে ৩টি, সীতাকুণ্ড ও বাঁশখালীতে ২টি করে ইটভাটা রয়েছে।

সরকারি উন্নয়নকাজ ও বাড়িঘর-দালান নির্মাণের কাজে প্রচুর ইট প্রয়োজন পড়ে চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলা ও উপজেলায়। প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরও ইটের ঘাটতি থাকে। তখন চট্টগ্রামের পাশ্ববর্তী পার্বত্য জেলা থেকেও আনা হয় ইট। কিন্তু এবার ইটভাটা ভর্তি পড়ে আছে প্রস্তুত করা ইট। আর এতেই মালিকদের মাথায় হাত!

৬ কোটি ইট পড়ে আছে চট্টগ্রামের ৪০৫ ভাটায়, কেনার লোক নেই 1

ইটভাটার মালিকদের তথ্যমতে, অক্টোবর থেকে শুরু হবে নতুন করে ইট উৎপাদনের প্রস্তুতি। কিন্তু নতুন করে আর ইট উৎপাদনে যেতে পারবে না চট্টগ্রামের প্রায় ৭০ শতাংশ ইটভাটা। কাঁচা ইট তৈরির জন্য মাঝিদের দিতে হয় অগ্রিম টাকা। এবার মাঝিদের অগ্রিম টাকা দিতে পারেনি প্রায় ৮০ ভাগ ভাটার মালিক।

চট্টগ্রামের ভূজপুরের মিতালী ব্রিকস ফিল্ডের মালিক আলমগীর হোসেন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাটার চারদিকে পড়ে আছে প্রস্তুত করা ইট। বিক্রি করতে চাইলেও টাকা বাকি এবং দামে সস্তা চাচ্ছে ক্রেতারা। ভাটির ভিতরেও রয়ে গেছে ইট। আগামী সিজনে এ ব্রিক ফিল্ড আর চালু করতে পারবো না। শ্রমিক-মাঝির টাকাও পরিশোধ করতে পারি নাই।’

সাতকানিয়া উপজেলার ব্রিকস ফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘গত মৌসুমের ইট বিক্রি না হওয়ায় আগামী মৌসুমের জন্য ফিল্ড আর চালু করতে পারবে না অনেক মালিক। কারণ টাকা রোলিং করতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘গত মাসে আমার একটি ইটও বিক্রি হয়নি। অনেক ব্রিক ফিল্ডের মালিক লস দিয়ে এবং বাকিতে ইট বিক্রি করছেন। এতেও উভয় সংকটে পড়তে হচ্ছে মালিকদের।’

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের সাথে ইট বিক্রির একটি সম্পর্ক রয়েছে। করোনায় ব্যক্তি পর্যায়েও কোন ধরনের ঘরবাড়ি নির্মাণ কাজও চলেনি। এতে ইট বিক্রি না হওয়ায় অনেকে পথে বসতে বসেছে।’

ইট প্রস্তুতকারী ভাটার মালিকদের সংগঠন ব্রিকস ফিল্ড মালিক এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্রিকফিল্ড মালিকদের মধ্যে হাহাকার চলছে। সামনের মাস থেকে ইট তৈরির প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা । যেহেতু শুষ্ক মৌসুম আসতেছে। কিন্তু আমরা এখনও ব্রিকফিল্ড চালুর চিন্তাও করতে পারছি না। কারণ করোনা মহামারি আমাদের ব্যাপকভাবে ক্ষতি করে দিয়েছে। অনেক ইটভাটায় পড়ে রয়েছে হাজার হাজার পিস ইট। বিক্রি না হলে কিভাবে আমরা সামনের বছর চালু করবো? দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে।’

তিনি জানান, দেশে ৭ হাজার ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ৪০৫টি। একটি ইটভাটায় গড়ে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন হয়। সে হারে চট্টগ্রামের ১২ কোটি ইট উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু ৬ কোটি ইট বিক্রিই হয়নি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, দেশে করোনা মহামারির কারণে অনেক শিল্প কারখানা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও থাকতে পারে। এতে কারও হাত নেই। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ইট দরকার। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেহেতু থমকে গেছে, সেহেতু ইটও অবিক্রিত থাকতে পারে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!