জমি বর্গা নিয়ে চিচিঙ্গা আর বেগুন চাষ করেছিলেন কৃষক আলমগীর হোসেন (ছদ্মনাম)। চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাট ইউনিয়নে তার বাড়ি। ফলনও হয়েছিল বেশ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি তার ক্ষেতের ফসলের দাম তুলতে দেয়নি। মণপ্রতি ১০০ টাকায় বেগুন আর ১২০ টাকায় চিচিঙ্গা বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাকে। অথচ রমজানের আগে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম শহরেই বেগুনের কেজি ছিল ৬০ টাকা!
শুধু আলমগীর হোসেন নয়, করোনা পরিস্থিতিতে বাজারজাত করতে না পেরে এভাবে পথে বসতে হয়েছে পটিয়ার শত শত কৃষককে।
শুধু কি কৃষক? ওই এলাকার মুরগী উৎপাদনকারী, মৎস্য খামারি, গরুর দুধের খামারি থেকে শুরু করে উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে জড়িত মানুষকে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় কষ্ট। কারণ তারা কেউই পায়নি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য। আবার দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে খেটে-খাওয়া মানুষও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এদের ঘরে ঘরে শুরু হয় খাবার সংকট।
ওই এলাকার নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সংকট বেড়ে যায় বহুগুণে। কারণ তারা তাদের সংকট সহ্য করছে মুখ বুজে, কাউকে বলতে পারেনি ঘরে খাবার না থাকার কথা।
এ অবস্থায় অসহায় এসব মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। এ পর্যন্ত পটিয়ার ৬৫ হাজার মানুষের ঘরে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন ১৫ দিনের খাদ্যসামগ্রী।
এ বিষয়ে পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খুব কষ্টে আছে আমার এলাকার মানুষ। কারণ আমার এলাকার জনগণ উৎপাদনমুখী। তারা কেউ বেকার ছিল না। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয়ও তুলতে পারেনি। সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অনেক কৃষককে ১০০ টাকা মণ ধরে সবজি বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ শহরে এক কেজি সবজি বিক্রি হচ্ছিল ৫০ টাকায়।’
তিনি আরও বলেন, আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে পটিয়ার খাদ্যসংকটে থাকা ৬৫ হাজার পরিবারের তালিকা তৈরি করেছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব খাদ্যসামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর বাইরেও সংকটে থাকা বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ তার প্রয়োজনের কথা ফেসবুক ও মোবাইলে জানাচ্ছেন। তাদের তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়ে ঘরে ঘরে জরুরী খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে বিশেষ সহযোগী দল।’
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে পটিয়ার ১৭টি ইউনিয়নে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। রমজান উপলক্ষে প্রায় ২০ হাজার পরিবারকে বিতরণ করা হয় ইফতারসামগ্রী। সরকারের নির্দেশে জনসমাগম পরিহার করে ঘরে ঘরে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
আদর/এমএফও