৫ বিশ্বরেকর্ড চট্টগ্রামের ছেলে পণ্ডিত সুদর্শনের ঝুলিতে, এবার সাড়ে ১৬ ঘণ্টা

বিশ্বরেকর্ডের নেশায় ধরেছে চট্টগ্রামের সন্তান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ পণ্ডিত সুদর্শন দাশকে। একের পর এক গড়ছেন রেকর্ড। আগেই তার হাতের মুঠোয় ধরা দেয় চার চারটি বিশ্বরেকর্ড। টানা ১৪ ঘণ্টা ড্রাম রোল বাজানোর বর্তমান বিশ্বরেকর্ডটি তারই দখলে। এবার গড়লেন আরও একটি নতুন বিশ্বরেকর্ড— নিজের রেকর্ডই নিজে ভাঙলেন।

এবার টানা ১৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বাজিয়ে দীর্ঘ সময় ড্রাম রোল বাজানোর নতুন রেকর্ড গড়লেন সুর্দশন দাশ। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় বাজানো শুরু করেন সুদর্শন। বিরতিহীন বাজিয়ে থামেন পরদিন সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে।

২০১৯ সালে ১৪০ ঘন্টার বেশি সময় ধরে ড্রাম সেট বাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড সুদর্শন দাশের
২০১৯ সালে ১৪০ ঘন্টার বেশি সময় ধরে ড্রাম সেট বাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড সুদর্শন দাশের

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের নিয়ম অনুসারে, দীর্ঘ সময় ধরে বাদ্য বাজানোর ফাঁকে কোনো বিরতি নিতে পারেননি সুদর্শন দাশ। তবে বাজানোর সময় অন্য কেউ পানীয় বা হালকা খাবার তাকে খাইয়ে দিয়েছেন। ড্রাম বাজানোর পুরো সময়টাই ধারণ করা হয় দুটি ভিডিও ক্যামেরায়। এসব যাচাই-বাছাই শেষে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ স্বীকৃতি দেবে আনুষ্ঠানিকভাবে।

যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী চট্টগ্রামের ছেলে সুদর্শন দাশের ঝুলিতে রয়েছে দীর্ঘ সময় তবলা, ঢোল, ড্রাম রোল ও ড্রামসেট বাজানোর চারটি বিশ্ব রেকর্ড। সুদর্শন দাশের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নে। তবে তার জন্ম চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে। বাবা অমূল্য রঞ্জন দাশ ও মা বুলবুল রাণী দাশ।

দ্বিতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ঢোল ম্যারাথন’ করতে বাজান টানা ২৭ ঘন্টা।
দ্বিতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ঢোল ম্যারাথন’ করতে বাজান টানা ২৭ ঘন্টা।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই টানা ৬ দিন ধরে ১৪০ ঘন্টা ৫ মিনিট সময় ড্রাম সেট বাজিয়ে চতুর্থ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মালিক হন চট্টগ্রামের ছেলে সুদর্শন। ২০১৫ সালে স্টিভ গউল নামে এক ব্যক্তি ১৩৪ ঘন্টা ৫ মিনিট ড্রামসেট বাজিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন। সেবার ওই রেকর্ডটি হাতিয়ে নেন পণ্ডিত সুদর্শন।

এর আগে তিনি তার প্রথম রেকর্ড ‘লংগেস্ট তবলা ম্যারাথন’-এ বাজিয়েছেন টানা ৫৫৭ ঘন্টা ১১ মিনিট। ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে টানা ২৫ দিন তবলা বাজান সুদর্শন।

তৃতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ইনডিভিজুয়্যাল ড্রামরোল’ এর জন্য বাজান টানা ১৪ ঘন্টা।
তৃতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ইনডিভিজুয়্যাল ড্রামরোল’ এর জন্য বাজান টানা ১৪ ঘন্টা।

দ্বিতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ঢোল ম্যারাথন’ করতে বাজান টানা ২৭ ঘন্টা। ২০১৭ সালে পূর্ব লন্ডনের মেনর পার্ক এলাকার শিভা মুনেতা সঙ্গম হলে ২০ জুন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত ২৫টি সুরের তালে টানা ঢোল বাজান সুদর্শন। প্রতিটি সুর, গান, মিউজিক ও টাইমিং সবকিছু মিলিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়ে তাকে সনদ দেয় গিনেস কর্তৃপক্ষ।

তৃতীয় রেকর্ড ‘লংগেস্ট ইনডিভিজুয়্যাল ড্রামরোল’ এর জন্য বাজান টানা ১৪ ঘন্টা। ২০১৮ সালের ৪ জুলাই সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে টানা ১৪ ঘণ্টা ড্রাম বাজান তিনি।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের স্বীকৃতিপত্র হাতে পণ্ডিত সুদর্শন।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের স্বীকৃতিপত্র হাতে পণ্ডিত সুদর্শন।

পণ্ডিত সুদর্শন যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমির অধ্যক্ষ। তার প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বাদ্যযন্ত্রে তাল তোলার কসরত শেখেন। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহ্যাম এবং রেড ব্রিজ কাউন্সিলের অধীনে তিনি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ‘মিউজিক ইন্সপেক্টর’ হিসেবে কাজ করেন।

চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে সুদর্শনের তবলায় হাতেখড়ি হয় চার বছর বয়সে। ১৯৯০ সালে ফুলকুঁড়ি আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পাওয়ার দুই বছরের মাথায় শান্তিনিকেতনে যান পণ্ডিত বিজন বিহারি চ্যাটার্জির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে। সেখানেই ১৯৯৮ সালে মেলে ‘তবলাবিশারদ’ উপাধি।

পরে আইন পড়তে লন্ডন গেলেও তবলার নেশা তাকে ছাড়েনি। ২০০৪ সালে নিউহ্যাম এলাকায় ‘তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন সুদর্শন। ২০১১ সালে তার ‘লার্ন টু প্লে তবলা’ ডিভিডি আকারে প্রকাশিত হয়। দুই বছর পর বাজারে আসে ‘লার্ন টু প্লে তবলা উইথ মিউজিক’।

চ্যানেল ফোর, বিবিসি টেলিভিশন, স্কাই টিভি ও ব্রাজিলের ফিনিক্স টেলিভিশনে তবলা বাজানো সুদর্শনের রয়েছে ১০০টির বেশি কনসার্ট ও পুরস্কার বিতরণীতে বাজানোর অভিজ্ঞতা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!