৫ ইসলামী বক্তার হাতে ইউটিউবের নাটাই, ওয়াজের ভিডিওর কোটি কোটি ভিউ
ওয়াজের এক চ্যানেলেরই আয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা
লাখ লাখ অনুসারী নিয়ে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হয়ে উঠেছেন ইসলামী বক্তারা। বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবে তাদেরই অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য। অনেক ইসলামী বক্তার আছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। ফেসবুকে আছে নিজস্ব পেইজ। সেখানে তাদের লাখ লাখ অনুসারী। এর বাইরে ফেসবুক ও ইউটিউব দুটোতেই ওয়াজভিত্তিক চ্যানেল ও পেইজগুলোর জনপ্রিয়তা বেশ। তবে এই জনপ্রিয়তার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে ইসলামী বক্তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সূত্রে উস্কানিমূলক কথাবার্তা। সেই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বক্তাদের ঠাট্টা কিংবা তামাশাও ওয়েবজগতে প্রচণ্ড জনপ্রিয়। সবমিলিয়ে ওয়াজ দেখা পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের নতুন ট্রেন্ডে।
ইউটিউব ও ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ ইসলামী বক্তা হলেন মিজানুর রহমান আজহারী, হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, গিয়াস উদ্দীন তাহেরী, এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী এবং আহমাদুল্লাহ। বর্তমানে মালয়েশিয়াপ্রবাসী মিজানুর রহমান আজহারীর ইউটিউব চ্যানেলটি কোনো ভিডিও প্রকাশের আগেই সংগ্রহ করেছিল ১০ লাখ সাবস্ক্রাইবার। মাত্র একবছরে তার চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখেরও বেশি। এর বিপরীতে দীর্ঘ সময়জুড়ে ইউটিউবে থাকা বাংলাদেশের শীর্ষ ইউটিউবার হিসেবে পরিচিত সালমান মুক্তাদিরের সাবস্ক্রাইবার এখনও ১৫ লাখ। এতেই বোঝা যায়, ওয়াজের ভিডিওগুলো কতোটা ব্যাপকভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করছে।
শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত মিজানুর রহমান আজহারীর নিজের পরিচালিত ইউটিউব চ্যানেলে ২২টি ওয়াজের ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯২ বার। চ্যানেলটি খোলা হয় ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর। একই সময়ে আব্বাসী টিভির (এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী) চ্যানেলে ৫৯১টি ভিডিও দেখা হয়েছে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৩৪ হাজার ২৯৬ বার। এটি খোলা হয় ২০১৯ সালের ৩ জুন। গিয়াস উদ্দীন তাহেরীর ইউটিউব চ্যানেলে ১১৬টি ভিডিও দেখা হয়েছে ৯২ লাখ ৫৫৬ বার। এটি খোলা হয় ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি। আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহর ইউটিউব চ্যানেলে ৭৪৩টি ভিডিও দেখা হয়েছে ৩ কোটি ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৫ বার। এটি খোলা হয় ২০১১ সালের ২৪ জুলাই। আহমাদুল্লাহ পরিচালিত আল সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ইউটিউব চ্যানেলে ১০০৪টি ভিডিও দেখা হয়েছে ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৫১ হাজার ২০৯ বার। এটি খোলা হয় ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর।
‘উস্কানিমূলক বক্তৃতা’ দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নামে অবমাননাকর বক্তব্য রাখার অভিযোগে শিশুবক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানিকে আটক করা হয়। ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা ও উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মুফতি আমির হামজাকে আটক করে পুলিশ। তবে মজার বিষয় হলো, তারা আটক হওয়ার পর তাদের বক্তৃতার ভিডিওগুলোর দর্শকসংখ্যা আরও বেড়েছে।
এদিকে ইসলামী বক্তাদের নিজস্ব চ্যানেল তো বটেই, শুধু ওয়াজ প্রচার করে এমন চ্যানেলগুলোর ভিউসংখ্যাও অবিশ্বাস্য। শুধু ওয়াজ প্রচার করে ‘রোজটিভি২৪’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল ৯৩ কোটিরও বেশি ভিউ পেয়েছে এ পর্যন্ত। এটিই শুধু নয়, এক কোটি থেকে ৯০ কোটিরও বেশিবার দেখা অন্তত ২০টি চ্যানেলের খোঁজ পাওয়া যায় ইউটিউবে— যারা শুধু ওয়াজই প্রচার করে থাকে। কেন এই জনপ্রিয়তা— তার নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, মূলত বিতর্ক, ঠাট্টা, দ্বন্দ্ব, উত্তেজনা এবং অনেক সময় উস্কানিসহ সব মিলে বিনোদনের পরিপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে এসব ভিডিও। ফলে অসংখ্য মানুষকে এগুলো আকৃষ্ট করছে। স্বীকার না করে উপায় নেই যে, ওয়াজ দেখা এখন দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নতুন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ইউটিউব ও ফেসবুকে ধর্মীয় বক্তাদের প্রাধান্য বাড়ছে ক্রমেই।
ওয়াজের ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে প্রচার করে এমন চ্যানেলগুলোর মধ্যে দেশে এখন সবচেয়ে বেশি ভিউ রোজ টিভি টোয়েন্টিফোর নামের একটি চ্যানেলের। ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করা চ্যানেলটির প্রায় ২ হাজার ভিডিও এ পর্যন্ত দেখা হয়েছে ৯৩ কোটি ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৯ বার। শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত ইসলামিক ওয়াজ বগুড়া নামের একটি চ্যানেলের ভিউসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩। চ্যানেলটি তৈরি হয় ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর। একই সময়ে মুসলিম টিভি চ্যানেলের ভিউসংখ্যা ৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ২৮৬। চ্যানেলটি তৈরি হয় ২০১৭ সালের ১৬ মে। ইসলামের রাস্তা নামের আরেকটি চ্যানেলের ভিউসংখ্যা ৩৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪। চ্যানেলটি তৈরি হয় ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। এমএইচআর বাংলা ওয়াজ নামের চ্যানেলের ভিউসংখ্যা ২৭ কোটি ৪৭ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৩। চ্যানেলটি তৈরি হয় ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর।
এটিএম বুথের তরুণ নিরাপত্তাকর্মী মকবুল হোসেন মোবাইলে বুঁদ হয়ে দেখছিলেন ওয়াজের ভিডিও। ইউটিউবের সেই ভিডিওর বক্তব্য কানে আসছিল। দর্শকরা জোরে সাড়া না দেওয়ায় একজন বক্তা কড়া সুরে তাদের গলার আওয়াজ বাড়াতে বললেন। নাস্তিকদের ইঙ্গিত করে উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলছিলেন ধর্মীয় বক্তা ইলিয়াছুর রহমান জিহাদী— ‘এই বেঈমানগুলারে কুত্তার মতো পিটাতে হবে। যুবকরা তোমরা কথা বলো না কেন? তোমাদের আওয়াজ এত কম শোনা যায় কেন?’
ইউটিউবে সাত লাখের বেশি ফলোয়ার থাকা ‘নাইস ওয়াজ’ নামে একটি ভেরিফাইড চ্যানেলে ‘নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জিহাদী হুজুরের বাঘের হুঙ্কার’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। সেই ভিডিও মকবুলকে কিভাবে প্রভাবিত করলো তা বোঝা গেল না। কারণ তিনি বেশি কথা বলেন না। স্ক্রল করে তিনি অন্য বক্তাদের ভিডিও দেখতে থাকেন।
তবে এটা ঠিক যে, ওয়াজের সব ভিডিওই উত্তেজনাপূর্ণ নয়। ইউটিউবে অসংখ্য ভেরিফাইড চ্যানেলে শত শত বক্তার এরকম হাজারও ভিডিও রয়েছে। চ্যানেলগুলোর অনুসারীর সংখ্যা লাখ লাখ। একেকটি ভিডিও প্রায় কয়েক লাখবারেরও বেশি দেখা হয়েছে। ওয়াজ নয়, কিন্তু ওয়াজের পর্যালোচনা উপস্থাপন করেও অনেক ইউটিউবার লাখ লাখ ভিউ সংগ্রহ করছেন। নামে প্রযুক্তিনির্ভর চ্যানেল মনে হলেও ‘টেক ভয়েস বিডি’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল শুধু ওয়াজের চটুল পর্যালোচনা করেই ভিউ পেয়েছে প্রায় নয় কোটি। এই সবকিছু মিলিয়ে স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ধরনের পরিবর্তন আসছে— যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় কারও পক্ষেই।
বাংলা ওয়াজ চ্যানেলগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ চ্যানেল রোজ টিভি টোয়েন্টিফোরে আপলোড করা প্রায় সব ধর্মীয় বক্তব্যই বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল থেকে ধারণ করা। কিছু চ্যানেল আবার পুরো ওয়াজের বদলে আকর্ষণীয় শিরোনাম জুড়ে দিয়ে বিষয়ভিত্তিক ছোট ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে থাকে। যার একটি বড় অংশজুড়েই থাকে বক্তাদের ঠাট্টা-তামাশা ও প্রতিপক্ষকে নিয়ে উস্কানি। যেমন গিয়াস উদ্দীন তাহেরীর অনেক বক্তব্যই ইউটিউবাররা ডিজে গানে ডাব করে ব্যবহার করেন। এগুলোও তুমুল জনপ্রিয়। টিকটকেও এসবের প্রচুর ব্যবহার দেখা যায়। ইউটিউবে ‘গিয়াস উদ্দিন তাহেরি ডিজে গান’ লিখে সার্চ দিলেও শত শত ভিডিও পাওয়া যায়।
ইউটিউবে ‘বাংলা ওয়াজ’ লিখে সার্চ দিলে কুরআনের বিভিন্ন বিষয়, নবী-রাসুলদের জীবনী, ইসলামী জীবনধারা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও চটকদার শিরোনামে বিভিন্ন ভিডিওর দেখা মেলে। যেমন গোলাম রব্বানী নামের একজন বক্তার ওয়াজের শিরোনামে লেখা— ‘সংসদে এমপি মমতাজের বক্তব্য নিয়ে এ কি বললেন গোলাম রব্বানী’। থাম্বনেইলে বক্তা এবং সংসদ সদস্যের ছবি দেওয়া।
এই চ্যানেলগুলোর অধিকাংশেরই মালিকানা আবার তৃতীয় পক্ষের। অন্যান্য ইউটিউব চ্যানেলের মতো এখানেও দর্শকদের ক্লিকবেইটের ফাঁদে ফেলা হয়। কেবলমাত্র গুটিকয়েক চ্যানেল ইসলামী বক্তারা নিজেরা অথবা তাদের নিয়োজিত ব্যক্তিরা পরিচালনা করেন।
ওয়াজভিত্তিক এসব চ্যানেলের আয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন। আবার এসব চ্যানেল থেকে ইসলামী বক্তারা আয় করে থাকেন কিনা— সে বিষয়েও তারা মুখ খুলতে চান না। তবে ইউটিউবে ১০ লাখবার কোনো ভিডিও দেখা হলে অ্যালগরিদম ও ভিডিওর দৈর্ঘ্য অনুসারে তিন হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার থেকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত উপার্জন করা যায়। এদিক থেকে উদাহরণ হিসেবে ওয়াজভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল রোজ টিভি টোয়েন্টিফোরের ৯০ কোটি ভিউয়ারশিপের সাথে তিন হাজার ৪০০ ডলার গুণ করলে দাঁড়ায় ৩০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার— যা প্রায় ২৫ কোটি টাকার সমান। শুধু ওয়াজ প্রচার করে— এরকম অন্তত ২০টি চ্যানেল আছে যেগুলোর ভিউ এক কোটি থেকে ৯০ কোটিরও বেশি।
ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে ওয়াজের ভিডিওগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখেছে বক্তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের কারণে দর্শকদের কাছে এই প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে আরও নাটকীয়। লক্ষ লক্ষ ভিউ পাওয়া এরকম অসংখ্য ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায়, যেখানে একজন বক্তা একই বিষয়ে অন্য বক্তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। বক্তারা পরস্পরের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একজন আরেকজনের ব্যাখ্যা বা বক্তব্য নাকচ করে দেন। খুব ভালোভাবে দেখলে বোঝা যায়, বাংলাদেশের ওয়াজশিল্প গড়ে উঠেছে প্রধানত ধর্মীয় বক্তাদের মধ্যকার তুমুল দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে। ওয়াজের মঞ্চে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, মাস্তানের ধরনে কথা বলা, গোপালগঞ্জের ছেলে বলে হুমকি দেওয়া, প্রধানমন্ত্রী আমার শাশুড়ি বলে চাপাবাজি করার মতো নানান বিষয় নিয়েও অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। গান গেয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, বিড়ি খাওয়ার পদ্ধতি দেখানো, বিভিন্ন অশ্লীল গানের শ্লোক গেয়ে শোনানোকে খুবই আপত্তিকর বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের মৌসুম মূলত শুরু হয় নভেম্বর মাসের দিকে। সেটা চলতে থাকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই চারমাসই মূলত ওয়াজ মাহফিলের পিক সিজন। জনপ্রিয় ইসলামী বক্তারা সাধারণত দিনে তিনটি মাহফিলেও অংশ নিয়ে থাকেন। একেকটি মাহফিলে অংশ নেওয়ার কতো টাকা করে তারা ফি নিয়ে থাকেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও গিয়াসউদ্দিন তাহেরী বিভিন্ন মহলে বলে থাকেন, তিনি এক লাখ টাকা করে নেন মাহফিলপ্রতি।
জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী নিজেই আব্বাসী টিভি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করে থাকেন। ওই চ্যানেলে থাকা পাঁচ শতাধিক ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় চার কোটিবার। অনলাইনে ধর্মীয় বক্তাদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি সম্পর্কে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, ‘কিছু সেন্সরশিপে’র কারণে আগে গণমাধ্যমে ধর্মীয় বক্তাদের উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে তারা সরাসরি দর্শকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পেয়েছেন। আমার কাছে বিষয়টি ইতিবাচক মনে হয়। কেননা, আপনি ইসলাম ব্যতীত বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সামাজিক অবকাঠামো এবং রাষ্ট্রকে মূল্যায়ন করতে পারবেন না। স্বাধীনতার মূল ধারণাই এসেছে ইসলাম থেকে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘বাঙালি মুসলমান সংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য ওয়াজের ময়দান একশ্রেণির ক্যানভাসার, মূর্খ বক্তাদের হাতে জিম্মি। ওয়াজ যে এখন ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এর বড় প্রমাণ হলো, করোনাকালীন এফডিসির পরিত্যক্ত অভিনেতারাও এখন টাকা কামাইয়ের জন্য ওয়াজের চেয়ারে বসেন।’
জার্মানির বনভিত্তিক ডিজিটাল মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইমুম পারভেজ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কে প্রবেশের সহজ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামি বক্তারা বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে প্রভাববিস্তারকারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে ইসলামী বক্তারা মূলধারার প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই নিজেদের কনটেন্ট তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কনটেন্ট তৈরি করার নিয়ন্ত্রণ থাকায় তারা নিজেদের বক্তব্য প্রায় কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছেন।’
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘অনেক বক্তা তাদের বক্তৃতায় নারীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। তারা নারীর মন এবং শরীরের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কথা বলেন। দেশের অন্যান্য ধর্মপ্রাণ মানুষদেরও কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন তারা।’ সমাজে বিষয়গুলোর দীর্ঘকালীন প্রভাব আছে বলে জানান সাদেকা হালিম।
সাদেকা হালিম ইসলামী বক্তাদের ওয়াজগুলোকে সরকারের নজরদারির আওতায় আনা উচিত বলে মত দিলেও সাইমুম পারভেজ বলছেন, ‘ঢালাওভাবে তাদেরকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করা উচিত নয়। পৃথকভাবে প্রতিটি কেস বিশ্লেষণ করতে হবে। সহিংসতা বা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে এ ধরনের ওয়াজগুলো হুমকিস্বরূপ। তবে নির্বিচারে সকল ইসলামী বক্তাকে সমাজের জন্য নেতিবাচক ভাবলে তা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে