৫০ বছরের শহীদ মিনার মুহূর্তেই গুড়িয়ে দিল কেইপিজেড, ধিক্কার জানালেন মুক্তিযোদ্ধারা

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার স্টিলমিলের কর্ণফুলী ইপিজেড গেইটের ভেতরে আছে একটি শহীদ মিনার। কয়েক যুগ আগের এই শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলেছে এই ইপিজেড কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের এই স্মৃতি স্তম্ভটি ভেঙে ফেলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা।

রোববার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে স্টিলমিল এলাকার কর্ণফুলী ইপিজেড গেইটের সীমানা প্রচীরের ভেতরে শহীদ মিনার ভাঙা অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয়রা। তবে মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহে আগে এটি ভেঙ্গে ফেলেছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। শহীদ মিনারটির পাশে সীমানা প্রাচীর থাকায় অনেকের নজরে আসেনি তা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেইপিজেড গেইট এলাকায় শহীদ মিনার সরানো স্থান পরিবর্তনের একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিয়েছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। ব্যানারে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতৃবৃন্দ, পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে কর্ণফুলী ইপিজেডের প্রবেশ মুখে বিদ্যামান স্মৃতি স্তম্ভটি কর্ণফুলী ইপিজেডের বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে স্থানান্তরের কাজ চলছে। সাবির্ক তত্ত্বাবধানে রয়েছে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানায়, স্বাধীনতার পর থেকেই স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে এই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন জানায় স্টিল মিল সিবিএ, বন্দর ও পতেঙ্গা থানা এলাকার শিক্ষার্থী ও সকল স্তরের মানুষ। ৫০ টন লোহা দিয়ে সুন্দর আকৃতি ভাষ্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয় সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পতেঙ্গা ও বন্দর এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় ৫০ বছরের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এই স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছিল। কারো অনুমতি না নিয়েই এটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখছেন।’

এ কর্ণফুলী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এনামুল হক বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুল বারেকসহ বেশ কয়েকজনের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এই শহীদ মিনার সরিয়েছি। আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। যেহেতু এটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, সেহেতু একই এলাকায় নতুন করে কেইপিজেডের স্কুলের সামনে নতুন করে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটির ডিজাইনও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। বরং বর্তমানে চেয়ে নতুনটি আরও সুন্দর হবে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘কেইপিজেডের প্রবেশমুখের শহীদ মিনারটি দীর্ঘদিনের। আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে সাবেক থানা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ মিয়া ভোলার কর্মী হিসেবে পরিচিত বর্তমান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের সঙ্গে আলাপ করে কেইপিজেডের জিএম এ কাজটি করেছে। প্রশাসন ও আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্তে চরম ক্ষুদ্ধ ও হতাশ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধরা। আগামীকাল এ বিষয়ে আমাদের একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানেই আমাদের বক্তব্য জানানো হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল বারেক বলেন, ‘আমি কখনও এমন সিদ্ধান্ত কাউকে দিইনি। বরং হঠাৎ করে কেইপিজেড গেইটের সামনে থেকে শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলায় আমি এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করেছি। এটি সরানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। সেখানে আমি কেন সরানোর সিদ্ধান্ত দেব?’

জানতে চাইলে পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিসান বিন মাজেদ বলেন, ‘কেইপিজেডের শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলার বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমাকে আগে জানানো হয়নি। ভেঙ্গে ফেলার পর শুনেছি। এরপর তাৎক্ষনিক সেখানে গিয়ে পরদির্শন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ স্থানীয় নেতা, কেইপিজেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৩০ নভেম্বর একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেখানে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

মুআ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!