বছরখানেক আগেও বাচ্চাদের নিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসেন রিতা দাশ। ১১ দিন আগে তার ঠাকুরমা মারা যান। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) যাচ্ছিলেন তার ক্রিয়া অনুষ্ঠানে। তবে কে জানতো বাপের বাড়ির পরিবর্তে রিতাকে যেতে হবে শ্মশানে?
দুই ছেলে, দুই মেয়ে, বড় ননদ ও ভাশুরের ছেলেসহ প্রবাসীর স্ত্রী রিতার পরিবারের সাত প্রাণ ঝড়েছে হাটহাজারীর রাস্তায়। পোস্টমার্টামের পর লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে পরিবারের হাতে। তাই এখনও রিতাদের লাশ যাচ্ছে না শ্বশুরবাড়ি চন্দনাইশে। বুধবার সকালে ওমান থেকে রিতার স্বামী নারায়ণ দাশ আসার পরই দাহ করা হবে সাতজনকে।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল পৌনে বারোটার দিকে হাটহাজারী থানার চারিয়া বোর্ড স্কুল এলাকায় বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে একই পরিবারের সাতজনের। সাথে আরও দু’জন আহত হয়ে ভর্তি আছেন হাসপাতালে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন রীতা দাশ, দুই ছেলে দীপ ও দিগন্ত, মেয়ে শ্রাবন্তী ও বর্ষা, বড় ননদ চিনু দাশ ও ভাশুরের ছেলে বিপ্লব। একই ঘটনায় সিএনজিচালক বিপ্লব ও রীতার আরেক স্বজন বাপ্পা দাশ আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্বশুরবাড়ি চন্দনাইশ থেকে ঠাকুরমার ক্রিয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
এদিকে ১৮ বছর আগে ওমান প্রবাসী নারায়ণ দাশের সঙ্গে বিয়ে হয় রিতার। বিয়ের পর প্রথমে রিতার কোলজুড়ে আসে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু শ্রাবন্তী। সে এখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। আরেক মেয়ে বর্ষা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া তার জমজ দুই ছেলেও ছিল।
এক নিমিষেই পরিবারের সকলের জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়ার খবর শুনে প্রবাসী নারায়ণ দাশ মুর্চ্ছা যাচ্ছেন বারবার। অথচ পরিবারের স্বচ্ছলতার কথা চিন্তা করে বছর দুয়েক আগে তিনি পাড়ি জমান ওমানে। সেখানে একটি লন্ড্রিশপে কাজ করেন তিনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ চৌধুরীসহ জনপ্রতিনিধিরা রিতাদের উঠোনে সামিয়ানা ও জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছেন।
এই ঘটনায় শোকের মাতম চলছে চন্দনাইশ ও ফটিকছড়িতে। আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের শান্ত্বনা জানাতে। তবে সাতটি প্রাণ যে সংসার থেকে একসঙ্গে চলে যায়৷ তাদের দুনিয়ার কোনো সান্ত্বনা কি শান্ত করতে পারে?
ডিজে