৪৮০০ টাকায় শুরু, ২ বছরেই ১৫ লাখ টাকার ব্যবসা

অনলাইন কেনাকাটায় সফল নারী উদ্যোক্তা

পারিবারিক কাজের মাঝের সময়টাতে অধিকাংশ মাকেই বাড়িতে অলস বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু রুমা আকতারের এভাবে সময় অপচয় করা ভালো লাগতো না। সবসময় চিন্তা করতেন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার। এ চিন্তা তাকে তাড়া করে বেড়াতো।

হঠাৎ একদিন ফেসবুকে থ্রি-পিস বিক্রির একটি পোস্ট দেখে তার মনে হলো, পর্দার আড়ালে থেকে এমন ব্যবসা তো সহজেই করা যায়। অথচ এসব থ্রি-পিসের দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং বিক্রি হচ্ছে বেশ দামেও। তিনি আর দেরি না করে গ্রামের কয়েকজন অসচ্ছল নারীর সঙ্গে কথা বললেন। তারাও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন। ব্যস! শুরু হয়ে গেল উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা।

২০১৮ সালের প্রথম দিকেই মাত্র ৪ হাজার ৮০০ টাকার পুঁজি দিয়ে ১০ পিস থ্রি-পিস নিয়ে শুরু করে দুই বছরে ১৫ লাখ টাকা মূলধন গড়েছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে তাহিরা ফ্যাশন হাউস নামের বুটিকসের মালিক ৩১ বছর বয়সী এই নারী। রুমা আকতার একজন সফল উদ্যোক্তা হলেও তার সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে নিজের পরিশ্রম ও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। অনলাইনে ব্যবসা করতে গিয়ে নানান প্রতিবন্ধকতাও মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে, তবে কখনোই তিনি থমকে যাননি। ক্ষুদ্র পুঁজি দিয়ে নিজের উপার্জন শুরু করে এখন গ্রামের অসচ্ছল ২৫ জন নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন বেকার নারীদের।

রুমা আকতার চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে তুলে ধরেছেন কিভাবে তিনি চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অত্মনির্ভরশীল হয়েছেন এবং গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানের সহযোগিতা করছেন।

তার কথায়, শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। গ্রামের নারীদের অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে বোঝাতেই পারতাম না। প্রথমে কয়েজনকে নিয়ে কাপড়ের কাজ শুরু করে দিই। মাস শেষে তারা যখন দেখল সংসারের কাজের পাশাপাশি ৮-১০ হাজার টাকা আয় করা যায়। এটি দেখে দু’এক মাসের মধ্যে আমার দলে যোগ দেন আরও ২০ নারী। তাদের দিয়েই আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে ও অফলাইনে পাইকারিতে শাড়ি-থ্রি-পিস হোম ডেলিভারি দিচ্ছি। প্রথম দু’এক মাস ৫০ থেকে একলাখ টাকার ড্রেস বিক্রি হতো। এখন দেখি ২-৩ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে। মঝেমধ্যে আরও বেশিও হয়। আমি সবসময় কাপড়ের কোয়ালিটি মেনটেইন করার চেষ্টা করি।

তবে করোনা মহামারির প্রথম দিকে একটু কাপড়ের চাহিদা করলেও এপ্রিল থেকে দ্বিগুণ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান রুমা আকতার। তার সফলতা দেখে বর্তমানে সীতাকুণ্ডের বেশ কয়েকজন নারীও অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করছেন বলেও জানান তিনি।

ধৈর্য্য আর শতভাগ ঝুঁকি নেওয়ার সাহস থাকলেও যে কেউ এই ব্যবসা করতে পারেন জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামে অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। যেহেতু গ্রামে কুরিয়ারের কোনো সুযোগ-সুবিধা কম থাকে। তবুও যেকোনো উপায়ে বিজনেস চালিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের সমালোচনা থাকলেও তাদের সহযোগিতা পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্বামীর অনুপ্রেরণায়ই এগিয়ে যাওয়া আমার। তিনি সহযোগিতা করছেন সবসময়। ২০০৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে আমার শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হয়। এরপর বিয়ে হয়ে যায়। বর্তমানে স্বামী এবং ২ পুত্র নিয়ে আমার সংসার। প্রথমে মেয়ে সন্তানের আশায় আগে থেকে নাম ঠিক করেছিলাম তাফাননুম তাহিরা। পরে দেখি পুত্রসন্তান হল। তবুও আমি মেয়ের প্রতি ভালোবাসা রেখে আমার ফ্যাশন হাউসের নাম দিলাম ‘তাহিরা ফ্যাশন হাউস’।

চাকরি পেছনে না ছুটে শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত নারীদের নিজের যোগ্যতা ও পরিচিতির জন্য স্বল্প বিনিয়োগে তার মতো অনলাইন ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রুমা আকতার বলেন, আমি গ্রামের অনেক মহিলাকে বিনা পুঁজিতে কাজ করার সুযোগ দিয়েছি। তারা আমার কাছ থেকে পাইকারি ড্রেস কিনে খুচরাতে বিক্রি করছে। এতে তারা প্রতিমাসে ৮-১০ টাকা আয় করে পরিবারের খবর যোগান নিচ্ছে। আমি মনে করি করোনার এই সময়ে একমাত্র নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম অনলাইন কেনাকাটা। তবে খাদিজা (রা.) এর আদর্শ অনুসরণ করে সামনে আরও ব্যবসা বাড়াবেন বলেও জানান এই সফল উদ্যোক্তা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!