শিক্ষার্থী আছে মাত্র ২০০। মালামাল কিনেছে ১ হাজার শিক্ষার্থীর। অতিরিক্ত এসব মালামাল কিনে বিপাকে পড়েছে কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র।
মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত এসব মালামাল কিনে একদিকে হচ্ছে সরকারের অর্থ অপচায় অন্যদিকে কিছু ব্যক্তি বিশেষের ইন্ধনে এসব মালামাল কিনে উল্টো বিপাকে পড়েছেন অনেকে। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলাও হয়েছে। তবে এসব মালামাল ব্যবহার না করেই নষ্ট করার চেয়ে সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া অথবা অন্য কোথাও ব্যবহার করার পরিবেশ তৈরির দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের বেশ কয়েকটি রুমে অসংখ্য চেয়ার-টেবিল, রেক, সোফাসহ অনেক আসবাবপত্র এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। বেশিরভাগ আসবাবপত্রে ময়লা জমে আছে। এছাড়া বেশকিছু আসবাবপত্র নষ্ট হওয়ার পথে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সরঞ্জাম ও আসবাবগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল কলেজের এক কর্মকর্তা জানান, এখানে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার মালামাল আছে। এসব মালামালের কিছু এখানে আছে আর কিছু কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রয়েছে। মূলত আগে যারা এখানে দায়িত্বে ছিলেন তারা মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মালামাল কিনেছিল। এতগুলো মালামালের প্রয়োজন ছিল না। কারণ এ মেডিকেলে শিক্ষার্থী আছে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে। সে হিসাবে ৪ ব্যাচে ২০০ জন শিক্ষার্থী থাকে। ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার শিক্ষার্থীর মালামাল কেনার এ অবস্থা। এছাড়া কিছু সরঞ্জাম কেনা হয়েছে যেগুলো এখানে বর্তমানেও ব্যবহারের সময় আসেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ডাক্তার বলেন, ‘কতিপয় ব্যক্তির লোভের কারণে আজকে আমরা সবাই বদনামের ভাগিদার। আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকে মনে করে মেডিকেল কলেজে হওয়া দুর্নীতিতে আমরা অংশিদার। কারণ আমরা এখানে চাকরি করি। তবে সত্যি কথা হচ্ছে এখানে আগের কিছু কর্মকর্তা এবং ঢাকা চট্টগ্রামের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার কারণে পুরো মেডিকেল কলেজ আজ সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। এটা সত্যি এখানে অনেক মালামাল আছে যেগুলো কোন দিন ব্যবহার হয় নি। সামনে ব্যবহার হওয়ার সম্ভবনাও নেই। আর আমাদের জানামতে প্রত্যেকটি মালামাল কেনা হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি দামে। তবে এ ঘটনার কারণে এখন দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সম্মুখীন হবে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। কারণ বর্তমানে আর কেউ কোন অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না কেউ কোন কমিটিতে থাকতে চাচ্ছে না। ফলে বর্তমানে সরকার বাজেট দিলেও সেটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে চলতি অর্থবছরেও বিপুল টাকা ফেরত গেছে।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘আমি এখনো নতুন। কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। তাই এসব বিষয়ে তেমন কিছু জানি না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। এ মামলায় আসামি ছিল বহুল আলোচিত আবজাল হোসেন এবং তার স্ত্রী রুবিনা খানম। অন্য ৮ আসামি হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক আবদুর রশীদ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুবাস চন্দ্র সাহা, সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, কলেজের হিসাবরক্ষক হুররমা আক্তার খুকি, কক্সবাজার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া, একই দপ্তরের সাবেক এসএএস সুপার সুরজিত রায় দাশ, পংকজ কুমার বৈদ্য এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলম।
এএইচ