২ শর্তে হাফ ভাড়া মিলবে চট্টগ্রামেও, শেষমেশ সিদ্ধান্তে পরিবহন মালিকরা

এক শর্ত সরকারের কাছে, অন্য শর্ত শিক্ষার্থীদের কাছে

চট্টগ্রামে গণপরিবহনেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তবে এক্ষেত্রে দুটি শর্ত রয়েছে পরিবহন মালিকদের। এর একটি শর্ত সরকারের কাছে, অন্য শর্ত শিক্ষার্থীদের কাছে।

শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে চট্টগ্রামের পরিবহন মালিকদের তিন সংগঠনের নেতারা একসাথে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে গতকাল (বৃহস্পতিবার) আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে আমরা মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতি, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও আন্ত জেলা বাস মালিক সমিতি একসাথে বসেছিলাম। সভায় আলাপ আলোচনা করে আমরা ছাত্রদের হাফ ভাড়ার দাবি মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের দুটি শর্ত আছে।’

এর একটি সরকারের কাছে ও অন্যটি শিক্ষার্থীদের কাছে জানিয়ে এই পরিবহন মালিক নেতা বলেন, ‘আমাদের গাড়ির বাৎসরিক আয়কর এই বছর ৪-৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে। সেটি আগের পরিমাণে বহাল করার দাবি থাকবে সরকারের কাছে। আর শিক্ষার্থীদের কাছে শর্ত হল বাসে ওঠার সময় তাদের ইউনিফর্ম আর আইডি কার্ড কনফার্ম করতে হবে।’

রোববার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও এ সময় জানান বেলায়েত হোসেন।

এদিকে বাস মালিক সমিতির নেতাদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে তারা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, তাদের দাবি সরকারের কাছে ছিল, বাস মালিকদের কাছে নয়। এক্ষেত্রে বাস মালিকদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তারা।

সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও গত কিছুদিন ধরে গণপরিবহনে হাফ ভাড়া সহ ৯ টি দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে হলেও আলাদা আলাদাভাবে চট্টগ্রামে এই আন্দোলনে ছিল ছাত্রলীগ ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে হাফ ভাড়ার দাবিতে সক্রিয় ছিল ছাত্রলীগ। আলাদা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলোও। তবে দুই আন্দোলনই ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। ২৫ নভেম্বর নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে বাম সংগঠনের ৪ নেতাকে আটক করে পুলিশ। পরে ছেড়েও দেয়। এর বাইরে চট্টগ্রামে ছাত্রদের আন্দোলনে বড় ধরনের কোনো সংঘাত বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য আরাফাত রুবেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মহানগর কমিটির নেতাদের সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, মহসীন কলেজ, এমইএস কলেজ, কমার্স কলেজে আলাদা আলাদা মিছিল সহ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল ছাত্রলীগ। এর বাইরে আমরা শুরু থেকেই ডিসি মহোদয়, পরিবহন মালিকদের সাথেও কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন।’

এর মধ্যে ওয়াসা মোড়ে একটি কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগ নেতাদের। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাত রুবেল বলেন, ‘ওয়াসার মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ছিল। পরে আমাদের অনেক দলের নেতাকর্মীরাও সে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের কলেজগুলোতে নিজস্ব কর্মসূচিও ছিল।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি রায়হান উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দাবি কিন্তু সরকারের কাছে, পরিবহন মালিকদের কাছে না। তবু তারা যে কথা বলেছেন সেটাকে স্বাগত জানাই। উনাদের যে দাবি সেগুলো বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে— এটা আশা করছি।’

নিজেদের আন্দোলনের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করে রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুধু চট্টগ্রামে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চল নিয়ে কথা বলছি না। আমাদের দাবি সারা দেশের গণপরিবহনে হাফ ভাড়া। এছাড়া আরও আটটি দাবিও আছে আমাদের।’

২৫ নভেম্বর পুলিশের হাতে আটক হওয়া ছাত্র ফেডারেশনের নেতা সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের ৯ দফা দাবির মধ্যে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর বিচার আর নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি যেমন ছিল, তেমনি শ্রমিকদের কাছ থেকে নামে বেনামে চাঁদা নেওয়া বন্ধ করার দাবিও ছিল। ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি আছে, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি ছিল, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও আছে। সবাই খালি হাফ ভাড়ার বিষয়ে কথা বলছে। বিষয়টা এরকম না।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!