নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে এবার করোনার টিকা নেওয়ার জন্য মোট ২৮টি ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করতে পারবেন ২৮ ধরনের নাগরিক। করোনার টিকা নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের সুযোগও খুলে দেওয়া হয়েছে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে। সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রামসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া হবে মডার্নার ভ্যাকসিন। এর বাইরে অন্য সব জেলা ও উপজেলার মানুষ পাবে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন।
মডার্নার ভ্যাকসিন তৈরি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্না। অন্যদিকে সিনোফার্মের ভ্যাকসিনটি চীনের তৈরি করা।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) থেকে এক আদেশে নতুন করে শুরু হতে যাওয়া করোনার টিকা প্রয়োগ কর্মসূচি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিবন্ধন না করে কেউ করোনার টিকা নিতে পারবে না।
যে ২৮ ক্যাটাগরিতে করোনার টিকা দেওয়া হবে
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে এর আগে ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী সাধারণ নাগরিকদের জন্য করোনার টিকা নেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগে এই বয়সসীমা ছিল সর্বনিম্ন ৪০ বছর। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আবাসিক শিক্ষার্থী, বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীদের জন্যও নিবন্ধনের সুযোগ থাকছে। সবমিলিয়ে ২৮ ক্যাটাগরির নাগরিক করোনার টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন সুরক্ষা অ্যাপে। এরা হলেন—
১. ৩৫ বছরের বেশি বয়সী সাধারণ জনগোষ্ঠী। তবে নিবন্ধনকারীদের মধ্যে বেশি বয়সী থেকে ক্রমান্বয়ে কম বয়সীদের প্রাধিকার অনুযায়ী করোনার টিকা দেওয়া হবে।
২. বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনা।
৩. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
৪. রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয় তথা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা
৫. প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ইত্যাদি বাহিনীর সদস্য। কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট সদস্যরাও করোনার টিকা পাবেন।
৬. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাব, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্য।
৭- কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, সেবিকা, মিডওয়াইফ, এসএসিএমও, অল্টারনেট মেডিকেল কেয়ার, হোমিওপ্যাথি, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ড বয়/আয়া, ধোপা, টিকেট ক্লার্ক, কুক-মশালচি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ফিজিওথেরাপিস্ট, অ্যাম্বুলেন্সচালক এবং অন্যান্য সরাসরি সম্পৃক্ত সেবাদানকারী।
৮. বার কাউন্সিল অনুমোদিত আইনজীবী।
৯. গণমাধ্যমকর্মী।
১০. জনসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী।
১১. ধর্মীয় প্রতিনিধি।
১২. মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি।
১৩. জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী।
১৪. নৌ-বন্দর, রেল স্টেশন ও বিমান বন্দরে কর্মরত ব্যক্তি।
১৫. মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় আবশ্যকীয় জনসেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী।
১৬. নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব নাগরিক আগে নিবন্ধন করে এক ডোজ করোনার টিকাও পাননি, তাদের করোনার টিকা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএস পাঠাতে হবে।
১৭. যাদের আগে এসএমএস পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কোনো কারণে করোনার টিকা নিতে পারেননি, তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ওই টিকা দিতে হবে।
১৮. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী (জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো অনুমোদিত ও নিবন্ধিত)।
১৯. সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী।
২০. সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস এবং সরকারি আইএইচটি-এর শিক্ষার্থী।
২১. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাঠানো তালিকা তালিকা অনুযায়ী)।
২২. বিডা’র অধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্ডে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী (যেমন— পদ্মাসেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি)।
২৩. ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
২৪. ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে FDMN জনগোষ্ঠী (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী)।
২৫. কৃষক ও শ্রমিক।
২৬. সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী শ্রমিকদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে ভ্যাকসিনেশনের জন্য নির্ধারিত সাতটি (৭) কেন্দ্র সংরক্ষিত থাকবে। এ পর্যায়ে এসব কেন্দ্রে অন্য নিবন্ধিতরা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না। কেন্দ্র সাতটি হলো— ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল গাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
২৭. সৌদি আরব ও কুয়েত ছাড়া অন্যান্য দেশের প্রবাসী শ্রমিকেরা ফাইজার যেসব কেন্দ্রে দেওয়া হবে, সেই সাতটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র ছাড়া অন্য কেন্দ্রে নিবন্ধন করে করোনার টিকা নিতে পারবেন।
২৮. বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হয়ে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন।
করোনার টিকা প্রয়োগের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
করোনার টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, প্রতি কেন্দ্রে একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুইটি করে বুথ থাকবে। ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র প্রতিদিন (শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বুথ চালু করতে হবে (যেমন— ১৫০-২০০ জনের জন্য একটি বুথ, ২০০ জনের বেশি হলে দুইটি বুথ চালু করতে হবে)। প্রতিটি বুথে দুই জন ভ্যাকসিনেটর ও তিন জন ভলান্টিয়ার থাকবেন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, প্রথম ডোজ করোনার টিকা দেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। প্রতিটি ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট মেডিকেল টিম থাকতে হবে যাদের AEFT ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকতে হবে। কেন্দ্রের ফোকাল পারসন সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রচার-প্রচারণা চালাবেন।
যে ১২ এলাকায় দেওয়া হবে মডার্নার ভ্যাকসিন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, খুলনা সিটি করপোরেশন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রংপুর সিটি করপোরেশন, সিলেট সিটি করপোরেশন ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে মডার্নার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
যেখানে দেওয়া হবে সিনোফার্মার ভ্যাকসিন
ওপরের ১২টি সিটি করপোরেশন বাদ দিয়ে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। তবে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ছাড়া কেউ করোনার টিকা নিতে পারবেন না।