২৬০০ লোককে অবৈধভাবে টিকা দিয়েছেন পটিয়ার রবিউল, মানেননি সংরক্ষণের নিয়মও

আরও কেউ জড়িত কিনা দেখবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের সব টিকাই ছিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) রবিউল হোসেনের হেফাজতে। এর সুযোগ নিয়ে তিনি অবৈধভাবে টিকা তো সরিয়েছেনই, অন্তত ২ হাজার ৬০০ জনকে আবার সেই টিকা দিয়েছেনও। আর এই টিকা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার যে নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, রবিউল সেটাও মানেননি।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় অবৈধভাবে করোনার টিকা দেওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি রবিউলের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত কমিটি যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বক্তব্য নেওয়ার পর চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যে।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) অভিযুক্ত রবিউল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশিদ আলম একথা নিশ্চিত করে বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা সেটা তদন্ত করা হবে।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় সিনোফার্মের তৈরি করোনার টিকা অনুমতি ছাড়াই সরিয়ে রেখে সেসব দেওয়া হয় নিবন্ধনহীন ২ হাজার ৬০০ জনকে। এসব টিকা দেওয়ার ব্যাপারে কোথাও থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি। এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটান পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেন। গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই পটিয়া উপজেলার ইউনিয়নের শোভনদণ্ডী আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং শনিবার (৩১ জুলাই) শোভনদণ্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই অনেককে টিকা দেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রবিউল। করোনার টিকা দেওয়ার অবৈধ এই আয়োজন করা হয় রীতিমতো ব্যানার টাঙ্গিয়ে।

এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শনিবার (৩১ জুলাই) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক সার্জারি) ডা. অজয় দাশের নেতৃত্বাধীন ওই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুল হায়দার এবং চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান। কমিটিকে বিষয়টি তদন্ত করে দুই কর্মদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ (সিনোফার্ম) টিকা প্রদান করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিম্নস্বাক্ষরকারী বিশ্বস্ত সূত্রে অবগত হন যে, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে উপজেলা, জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায় থেকে কোন প্রকার অনুমতি না নিয়ে চট্টগ্রাম জেলাধীন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উক্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেন কর্তৃক ৩০/৭/২০২১ এবং ৩০/৭/২০২১ কোভিড-১৯ (সিনোফার্ম) ভ্যাকসিন অন্যত্র নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন লোকদের প্রদান করা হয়েছে।’

জানা গেছে, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে অবৈধভাবে করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ করে মানুষের কাছে উচ্চমূল্যে সেসব বিক্রির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে পাঠানো একটি অভিযোগ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেনের বিরুদ্ধে এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারীদের টিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র (ইনজেকশন, সিরিঞ্জ ইত্যাদি) দেওয়াতে হয়রানি করা, বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাতা পাওনায় ইচ্ছাকৃত ভোগান্তি তৈরি করা, করোনাভাইরাসের রেজিস্ট্রেশনে অবৈধভাবে টাকা আদায় করা, ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় মানুষকে অহেতুক হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে সেই শুরু থেকে। এমনকি তার স্ত্রী স্বাস্থ্য সহকারী কুলসুমা আকতারকে মাঠ পর্যায় থেকে এনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, কর্মস্থলে বেশিরভাগ সময় তার স্ত্রী অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় রবিউল নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে দেন উপস্থিতির।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!