২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে নইলে আরো কর্মসূচি— মেয়রকে হাসিনা মহিউদ্দিনের অনুসারীদের হুঁশিয়ারি

চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তার অনুসারীরা। যিনি চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা। সমাবেশ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ক্ষমা চাওয়ার আল্টিমেটাম দেন।

মহিউদ্দিন অনুসারীদের অভিযোগ, এর আগে রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৬টি জেলার সাংগঠনিক প্রতিনিধি সম্মেলনের মঞ্চে হাসিনা মহিউদ্দিন বসেছিলেন। এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মঞ্চে বসা হাসিনা মহিউদ্দিনকে নেমে যেতে বাধ্য করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদেই মূলত দুদিন ধরে ফেসবুকের পাশাপাশি রাজপথে বিক্ষোভ করছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের যুবলীগ-ছাত্রলীগের একটি অংশ। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি হাসিনা মহিউদ্দিন।

অন্যদিকে মেয়র নাছির এ ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘গত (শনিবার) রাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা বসে সিদ্ধান্ত নেন মঞ্চে কারা বসবেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে- কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিবর্গ, দলের সংসদ সদস্য এবং ৬ জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সকল সহ-সভাপতিবৃন্দ মঞ্চে বসবেন।এর বাইরে সবাই বসবেন মঞ্চের সামনে দর্শকসারিতে। কারা কারা বক্তব্য দেবেন সে বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সভা শুরুর পর কারা মঞ্চে বসবেন সেটা আমি সঞ্চালক হিসেবে বারবার ঘোষণা দিয়েছি। আমি বারবার সবার কাছে সহযোগিতা চেয়ে বলেছি— আমরা সুশৃঙ্খলভাবে সভা শেষ করতে চাই। এরপরও কেউ কেউ মঞ্চে উঠেছেন। আমি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করিনি, অসৌজন্যমূলক আচরণও করিনি। শুধু অনুরোধ করে মঞ্চে কারা বসবেন- সেটা নিয়ে সিদ্ধান্তটা উনাদের জানিয়েছি।

বিষয়টি রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারকে অপমান উল্লেখ করে প্রতিবাদ করেন নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন তারা।

বিক্ষোভ সমাবেশের বক্তারা বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদের আবেগের বিষয় আর আবেগের বিষয়ে কেউ আঘাত করলে ছাড় দেবো না। গতকাল আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়া একটি শিষ্টাচার বর্জিত আচরণ। কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি তিনি করছেন? যেখানে মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন আসলে মঞ্চে থাকা নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে তাকে মঞ্চে ডাকেন। সেখানে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির তকে নামিয়ে দিয়েছেন যা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের প্রতি অসম্মান জানানো হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন,‘প্রতিনিধি সভার মঞ্চে কে থাকবেন আর কে থাকতে পারবেন না, তা যে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়, সে সিদ্ধান্তে সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীও ছিলেন। আর তিনি বলেছেন— হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া শোভনীয় হয়নি। যদি দলীয় শৃঙ্খলার চর্চার জন্য নামানো হতো তাহলে মঞ্চে অন্যদেরও নামিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল। যাদের নামিয়ে দেয়নি তাদের সাথে কি সম্পর্ক নাকী সামনে নির্বাচন তাই তাদের নামান নি।’

মেয়রকে উদ্দেশ্যে করে বক্তারা আরও বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করবো আপনি ক্ষমা চান। তা না হলে এর চেয়ে বেশি কর্মসূচিতে যাব। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারকে আঘাত করে কেউ পার পাবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষমা চাইতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘গতকালের ঘটনায় মেয়র নাছিরকে দেখলাম গণমাধ্যমে বলতে শৃঙখলার স্বার্থে তিনি মঞ্চ থেকে তিনি হাসিনা মহিউদ্দীনকে নামিয়ে দিয়েছেন। আমি বলতে চাই, উনি কোন ধরনের শৃঙ্খলার কথা বলেন সেটা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। বিভিন্ন সময়ে তিনি শৃঙ্খলার ভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিঃস্কার হয়েছেন। আমরা এই প্রেসক্লাব চত্বর থেকে মেয়রকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলাম। এর মধ্যে যদি তিনি এ ঘটনায় ক্ষমা না চান তাহলে পরবর্তীতে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’

তিনি আরও বলেন,‘গত তিন-চার বছর ধরে চট্টগ্রামে যে খুনের রাজনীতি হচ্ছে… সুদীপ্ত খুন হয়েছে, দিয়াজ খুন হয়েছে, নাসিম আহমেদ সোহেল খুন হয়েছে। কোনো খুনের বিচার হয়নি। এসব খুনিদের গডফাদার একজনই। আজ নেত্রীর কাছে নিবেদন করছি চট্টগ্রামের রাজনীতি থেকে গডফাদার নির্মূল করুন। অপশক্তি নির্মূল করুন।’

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা, কারা পরিদর্শক আজিজুর রহমানের আজিজের সঞ্চালনায় উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য উম্মে হাবিবা, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দীন, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর, শ্রমিক লীগ নেতা আবুল হোসেন আবু, যুবলীগ নেত্রী আঞ্জুমান আরা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এমইএস কলেজের ভিপি ওয়াসিম উদ্দিন, শ্রমিক লীগ নেতা আবু, আবুল হাসনাত বেলাল, সাবেক ছাত্রনেতা আবু সাঈদ সুমন, ফরহাদুল ইসলাম রিন্টু, আব্দুর রহিম শামীম, সাবেক কমিশনার মমতাজ, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম মাসুম, জয়নাল আবেদিন, আবু শাহাদাত চৌধুরী শিপন, জিয়ানুল ইসলাম জ্যাকব, আলী বাবু, হিমেল, মাইকেল, মেহেদী, মহিউদ্দিন, সাজ্জাদ, বেলাল ও বাদশাহসহ মহানগর আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃবৃন্দ।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!