২১ বছরের নিচে মদপানের অনুমতি মিলবে না, মুসলিম হলে লাগবে বড় ডাক্তারের সনদ

দেশে ২১ বছরের কম বয়সীরা আর মদপানের অনুমতি পাবেন না। মুসলমান ধর্মাবলম্বী কেউ মদপানের পারমিট নিতে চাইলে লাগবে এসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট। অন্যদিকে সব ধরনের মদের দোকান বন্ধ থাকবে শুক্রবার, মহররম, শবে বরাত, ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে কদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ছাড়াও সরকার নির্ধারিত দিনগুলোতে। এছাড়া কোনো এলাকায় কমপক্ষে ১০০ জন মদের পারমিটধারী থাকলে সেখানে দেওয়া হবে অ্যালকোহল বিক্রির লাইসেন্স। কোনো ক্লাবে ২০০ জন পারমিটধারী থাকলে সেখানে খোলা যাবে বার।

এমন সব বিধান রেখে অ্যালকোহল বা মদ উৎপাদন, কেনাবেচা, পান করা, পরিবহন, আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নিয়মনীতি স্পষ্ট করে প্রথমবারের মতো বিধিমালা তৈরি করেছে সরকার।

নতুন বিধিমালা অনুসারে, মদের বার খোলা রাখা যাবে বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে লেট ক্লোজিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, মদ কেনাবেচা, মদ্যপান ও পরিবহনের ক্ষেত্রে লাইসেন্স, পারমিট ও পাস নিতে হবে। কোথাও কমপক্ষে ১০০ জন মদের পারমিটধারী থাকলে ওই এলাকায় অ্যালকোহল বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হবে। ২১ বছরের কম বয়সের ব্যক্তি মদপানের অনুমতি পাবেন না।

অন্যদিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্যাক্রামেন্টাল ওয়াইন (আঙুরের নির্যাস থেকে তৈরি এক ধরনের মদ) ব্যবহারের জন্য বিশেষ পারমিট দেওয়া যাবে।

নতুন বিধিমালায় লাইসেন্স ও অনুমোদন ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সর্বনিম্ন ফি ১৫০ টাকা, আর সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। ডিস্টিলারি স্থাপনের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। দেশি মদপানের অনুমোদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। বিলাতি মদপানের অনুমোদন ফি তিন হাজার টাকা। লাইসেন্স ও অনুমোদনের মেয়াদ হবে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত।

নতুন বিধিমালায় যা যা আছে

  • ২১ বছরের নিচে কোন ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট দেয়া যাবে না। অর্থাৎ এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে এসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
  • হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা যেসব স্থানে সাধারণ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয় তারা বার স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • কোন এলাকায় ১০০ জন দেশি মদ বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেওয়া যাবে। অর্থাৎ কোন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানে যদি কমপক্ষে একশ জন সদস্য থাকেন যাদের এই পারমিট আছে সেখানেই অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে।
  • অ্যালকোহল বহন বা পরিবহনের জন্য অধিদপ্তর থেকে পাসের জন্য আবেদন করা যাবে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যে কোনো পথেই অ্যালকোহল পরিবহন করা যাবে। তবে সেটা পাসে উল্লেখ থাকতে হবে।
  • অ্যালকোহলে কোনো ধরনের ভেজাল মেশানো যাবে না।
  • পারমিটধারী ক্লাব সদস্যরা ক্লাবের নির্ধারিত স্থানে বসে মদপান করতে পারবেন।
  • কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে ২০০ জন অ্যালকোহল পারমিটধারী থাকলে তাদেরকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।
  • ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে, সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।
  • বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বার স্থাপন লাইসেন্স দেওয়া যাবে। যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে আবার পাঁচ তারকা বা তার চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।
  • বিদেশি মদের জন্য ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন কোন দেশ থেকে অ্যালকোহল আমদানি করে বিলাতি মদ উৎপাদন করা যাবে।
  • সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল ব্যবহার ছাড়া বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।
  • সরকার নির্ধারিত বিয়ার ছাড়া অন্য কোন বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।
  • ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ বাসায় মদপান করতে পারবেন।
  • বিদেশি মদ আমদানি বা রপ্তানির জন্য আবেদন করা যাবে।
  • বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না এমন ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, রেক্টিফাইড স্পিরিট, স্ট্রং অ্যালকোহল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেথিলেটেড স্পিরিট এবং শিল্প, গবেষণাগার ও অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অ্যালকোহল আমদানি করা যাবে।
  • যে ব্রান্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হবে সেই ব্রান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করতে হবে।
  • তবে পর্যটন কর্পোরেশন, বার বা সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ আমদানি করতে পারবে না।
  • যেসব ক্লাবে মদ্যপানের পারমিটধারী সদস্যের সংখ্যা দুশো বা তার চেয়ে বেশি সেসব ক্লাব তাদের চাহিদা ৪০ শতাংশ আমদানি করতে পারবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm