১৯ কোটি টাকা হাওয়া শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশনে!
স্বাক্ষর জালিয়াতি করে গোপনে সংগঠনের নাম পরিবর্তন
সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে গোপনে সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে জায়গা বিক্রি ও তহবিলের ১৯ কোটি টাকা মেরে দিয়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশনের কর্তারা।
আগ্রাবাদ বেপারিপাড়ায় সংগঠনের নামে কেনা জায়গা বিক্রির ১০ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকে সদস্যদের চাঁদা ও অনুদানের ৯ কোটি টাকার কোনো হদিস মিলছে না। আগের কমিটির ওপর দোষ চাপিয়ে সংগঠনটির বর্তমান কমিটিও এর কোনো দায় নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ মাস্টার স্টিভিডোর এসোসিয়েশনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশনে রূপান্তর করে অভিনব কৌশলে সংগঠনের ১৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে— এমন অভিযোগ এনে মা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক খুরশিদুল আলম রোববার (১৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার হোসেন চেম্বারে অবস্থিত বাংলাদেশ মাস্টার স্টিভিডোর অ্যাসোসিয়েশন ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী সংগঠন হিসেবে সুপরিচিত। এসোসিয়েশনের বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৫৭ জন। ওই ৫৭ সদস্যের চাঁদা ও অনুদানের টাকায় চট্টগ্রাম শহরের ডবলমুরিং থানার অন্তর্গত আগ্রাবাদ এক্সেস রোডস্থ বেপারীপাড়া এলাকায় ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৫ গন্ডা অথবা ৬ কাঠা জমি (দলিল নং-৮৫০৪ তাং-২২/১১/২০০৩) বাংলাদেশ মাস্টার স্টিভিডোর এসোসিয়েশনের নামে কেনা হয়। জমিটি কেনার পর বহুতলবিশিষ্ট বিএমএসএ টাওয়ার নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরাবর নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়। যা বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।’
অভিযোগপত্রে আরও জানানো হয়, ‘ইতোমধ্যে নাম পরিবর্তনে জড়িত অসাধু চক্রটি গোপনে নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের ১২৬৯/বি, আইয়ুব সেন্টারের এনএইচটি হোল্ডিং লিমিটেডের কাছে জালিয়াতির মাধ্যমে ওই জায়গা ১০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। জায়গা বিক্রির টাকা এসোসিয়েশনের তহবিলে জমা না করে চক্রটি তাদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন। গোপনে জায়গা বিক্রির কারণ ও বিক্রয়লব্ধ টাকার হিসাব প্রদান করার জন্য এসোসিয়েশনের সদস্যরা বারবার অনুরোধ জানানোর পরও হিসাব দেওয়া হচ্ছে না উল্টো হিসাব চাওয়া সদস্যদেরকে শারীরিক ও মানসিক এবং জীবনহানির ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সদস্যদের চাঁদা ও অনুদান বাবদ জমা থাকা ৯ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ছিল। ব্যাংকগুলো হলো ঢাকা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। চক্রটি ব্যাংক থেকে ওই টাকা গোপনে তুলে নিয়ে নিজেরা ভাগ বন্টন করে আত্মসাৎ করেছেন।’
ওই অভিযোগপত্রে অবৈধ সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধসহ অবৈধ কার্যকলাপে নিয়োজিত স্বঘোষিত নেতা নামধারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চেম্বার সভাপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন অভিযোগকারী খুরশিদুল আলম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানের একজন মালিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বার্থ অপারেটরদের একমাত্র বৈধ এসোসিয়েশন হলো বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশন। বাংলাদেশ মাস্টার স্টিভিডোর এসোসিয়েশন নামের সংগঠনটি নাম পরিবর্তন করে কিভাবে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশন হয়ে গেল, তা আমরা জানি না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও কিভাবে সংগঠনটিকে বৈধতা দিলো তা বন্দরই বলতে পারবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম শামসুজ্জামান রাসেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব অনেক আগের কথা। নাম পরিবর্তন ও জায়গা বিক্রির ঘটনা ঘটেছে আরো আট বছর আগে। মনজুর আলম ও মো. ইব্রাহীম সাহেবরা সভাপতি থাকাকালীন। আমি গত দুই বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। এছাড়া ব্যাংকে জমা টাকার বিষয়েও আমি কিছু জানি না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কোনো সংগঠনকে রেজিস্ট্রেশন দেয় না। রেজিস্ট্রেশন দেয় সরকার বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে। এখানে চট্টগ্রাম বন্দরের কোন দায় নেই।’
এমএ/সিপি