১৪ বছরে পদার্পণ করলো চট্টগ্রামের গ্রুপ থিয়েটার ‘নাট্যাধার’

চট্টগ্রামের গ্রুপ থিয়েটার ‘নাট্যধার’ চৌদ্দ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। ৩০ অক্টোবর নাট্যদলটির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

‘সৃষ্টি হোক সচেতন মানুষ’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের নাট্য আন্দোলনে যুক্ত নবীণ ও প্রবীণ বেশকিছু নাট্যকর্মী-নাট্যজনের সমন্বয়ে ২০০৬ সালে যাত্রা করেছিল ‘নাট্যাধার’। দলীয় প্রথম প্রযোজনা হিজড়া জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবন যন্ত্রণার নাট্যায়ন ‘শিখন্ডী কথা’ নাটকের মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘নাট্যাধার’। জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামের মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ করা ‘শিখন্ডী কথা’ নাটকের পান্ডুলিপিকার ছিলেন আনন জামান এবং প্রয়োগকার ছিলেন মোস্তফা কামাল যাত্রা।

ইতোমধ্যে ‘নাট্যাধার’ নাটকটির ৮১তম প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে।এ নাটকের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের মঞ্চ নাটকে রূপসজ্জার কর্মকার নাট্যাভিনেতা শাহীনুর সরোয়ারকে সম্মাননাও জানায় ‘নাট্যাধার’। দলীয় পরিকল্পনা ছিল দলের প্রতি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চট্টগ্রামের নাট্যাঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একজন নাট্যকলা কর্মীকে সম্মাননা জানানো হবে। ২০০৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর নাট্যযুধিষ্ঠির জিয়া হায়দারের প্রয়াণ ঘটলে, সে বছর থেকে ‘নাট্যাধার’ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ‘নাট্যাধার সম্মাননা’ পদকটির নাম ‘নাট্যযুধিষ্ঠির জিয়া হায়দার নাট্যপদক’ নামকরণ করে অধ্যাবধি প্রতি বছর চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট নাট্যজনকে নিয়মিতভাবে নাট্যপদক প্রদান করে আসছে।

প্রথম জিয়া হায়দার নাট্যপদক—২০০৮-এ পেয়েছিলেন অঙ্গন থিয়েটার ইউনিটের প্রধান নাট্যাভিনেতা আবদুস সাত্তার। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালে ১১তম জিয়া হায়দার নাট্যপদক পেয়েছিলেন নাট্যজন মুনির হেলাল। এ বছর ১২তম জিয়া হায়দার নাট্যপদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন নাট্যজন রবিউল আলম।

বিগত এক যুগে ‘নাট্যাধার’ একাধিক নাটকের প্রায় আড়াই শতাধিক প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে। নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘শিখন্ডী কথা’, ‘জাল’ ‘স্মৃতি-৭১’, ‘হিড়িম্বা’, ‘বীরাঙ্গনা স্বাক্ষাৎকার’, ‘ভগা কাইন’, ‘কাল বোধন’, ‘মাস্টারদা’, ‘ফুলজান’, উন্মাদ সাক্ষাৎকার’ ‘ইউএসটিসি বধ্যভূমি’ ‘৩২ ধানমন্ডি এবং,,,’ যাত্রাপালা ‘বাংলার মহানায়ক’ ইত্যাদি।

নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি নাটকে একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনকে ২০০৮ সালে এবং ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় নাট্যসন্ত রামেন্দু মজুমদারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নাট্যশালায় সংবর্ধনা প্রদান করে।

দক্ষ মঞ্চকর্মী তৈরি করতে নাট্যাধার প্রতি বছরই নাট্য বিষয়ক কর্মশালা, নাট্য বিষয়ক আড্ডা, শ্রুতিমঙ্গল এবং সমাজের প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক নাট্য প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনে বরাবরই সচেষ্ট ছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য আয়োজন হলো— মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নাট্য প্রদর্শনী, চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে ভ্রাম্যমাণ খোলা নাটক ও সভানাটক প্রদর্শনী, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল রাখার দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক ‘স্মৃতি-৭১’ এবং ‘বীরাঙ্গনা স্বাক্ষাৎকার’—এর সড়ক প্রদর্শনী।

প্রতিষ্ঠাকালে দলটির সাথে জড়িত ছিলেন দেওয়ান মাশরুজ্জামান সিদ্দীক মুকুট, মোস্তফা কামাল যাত্রা, অশোক বড়ুয়া, খন্দকার মুর্তাজা আলী, জামাল হোসাইন মঞ্জু, বাহার উদ্দিন মিরন, প্রবীর পাল, মাফতোহা মুনমুন, ফারহানা পারভীন প্রীতি, সাখাওয়াত শিবলী, আবু দাইয়ান, রাহাত কবির, দেবাশিস্ রুদ্র, মাহাবুব মাহীন, হারুন বাবু প্রমুখ।

বর্তমানে দলটির সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেওয়ান মাশরুজ্জামান সিদ্দীক মুকুট ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তফা কামাল যাত্রা।

দেওয়ান মাশরুজ্জামান সিদ্দীক মুকুট দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করা নাট্যাধারের প্রধান পরিকল্পনা। পুরাতন ও নতুন নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে নাট্যাধার অনেক দূর এগিয়ে যেতে চায়। নাটকের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করতে চায়। সকল প্রকার অন্যায় ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে নাট্যাধার সবসময় সোচ্চার ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।

এসবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!