১৪ বছরে কর্ণফুলীর প্রস্থ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি

‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’-এর দাবি

গত ১৪ বছরে কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে অর্ধেকেরও বেশি প্রশস্থতা হারিয়েছে বলে দাবি করেছে ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। দখল ও দূষণের কারণে এমনটা হয়েছে দাবি করে দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে ঐতিহ্যবাহী এই নদীটি খালে পরিণত হওয়ার শঙ্কার কথাও জানান এই সংগঠনের নেতারা।

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা।

‘কর্ণফুলী দখল জরিপ প্রতিবেদন-২০২০’ নামে তাদের করা একটি প্রতিবেদন সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তারা। এতে প্রতিবেদনটি তুলে ধরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান।

গত ৩০ আগস্ট থেকে ২১ দিনব্যাপী ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু থেকে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারের মনোহরখালী পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৬ সালে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের সময় এডিবির মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী কর্ণফুলীর প্রস্ত ছিল ৮৮৬ দশমিক ১৬ মিটার। কিন্তু ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ কর্তৃক তৈরি নতুন জরিপে দেখা যাচ্ছে শাহ আমানত সেতুর নিচে বর্তমানে ভাটার সময় নদীর প্রস্থ থাকছে মাত্র ৪১০ মিটার। জোয়ারের সময় চর অতিক্রম করে তা সর্বোচ্চ ৫১০ মিটার পর্যন্ত হয়। এছাড়া ভরাট হয়ে যাওয়া প্রায় নদীর ৩০০ মিটার এলাকা দিয়ে কোনো প্রকার নৌ-যান চলাচল করতে পারে না। এ কারণে স্থানীয়রা কর্ণফুলী নদীর মাঝবরাবর অঘোষিত ঘাট বসিয়ে যাত্রী পারাপার করছে।
১৪ বছরে কর্ণফুলীর প্রস্থ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি 1
প্রতিবেদন আরও উঠে এসেছে, এডিবির মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী রাজাখালী খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৮৯৮ মিটার, কিন্তু বাস্তবে তা মাত্র ৪৬১ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ থাকার কথা ৯৩৮ মিটার, কিন্তু বর্তমানে সেখানে আছে ৪৩৬ মিটার। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্মিত মেরিনার্স পার্ক এলাকায় কর্ণফুলীর প্রশস্ততা ৯৮১ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে আছে ৮৫০ মিটার; যদিও সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন ড্রেজিং অব্যাহত রেখেছে। ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় কর্ণফুলীর প্রস্থ হওয়ার কথা ৯০৪ মিটার, কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণ করায় সেখানে নদীর প্রশস্ততা নেমে এসেছে ৭৫০ মিটারে।

কর্ণফুলী নদী রক্ষায় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে- অবিলম্বে কর্ণফুলী মেরিনার্স পার্ক, সোনালী মৎস্য আড়ত, বেড়া মার্কেটসহ কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর গতিপথ ফিরিয়ে আনা, নিয়মিত ড্রেজিং করে ও প্রয়োজনীয় নদীশাসনের মাধ্যমে বাংলাবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকার নৌবন্দর ঝুঁকিমুক্ত করা। নদীর পাড়কে স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করা ও পাড় রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করা এবং প্রস্তাবিত হাইড্রো মরফলোজিক্যাল মডেল স্টাডির মাধ্যমে কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রবাহ ও নদীশাসনে ব্যবস্থা নেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, অধ্যাপক নোমান সিদ্দিকী, কর্ণফুলী গবেষক ড. মো ইদ্রিস আলী, অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, অধ্যাপক মনোজ কুমার দে প্রমুখ।

এআরটি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!