জন্ম হতে এই রকম। এখানে অনেক নেতা আছে, প্রতিবারই বলে ব্রিজ হবে। জন্ম থেকে শুনি, কিন্তু হচ্ছে না তো। বয়স প্রায় শেষ হয়ে এলেও, যেটি শেষ ভরসা ছিল সেটিও সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেল—আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণহাট ইউনিয়নের হাঁপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী নুরুল হক।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা নদীর ওপর নির্মিত শতবর্ষী একটি কাঠের সাঁকো ১২ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে তৈরি জরাজীর্ণ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২২ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে সেটিও তলিয়ে গেছে।
উপজেলার নারায়ণহাট বাজারের কোলঘেঁষে বয়ে গেছে হালদা নদী। নদীর উত্তর পাশে নারায়ণহাট বাজার এবং দক্ষিণ পাশে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১০-১২টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস। সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও নদী পারাপারের জন্য এখনও তৈরি হয়নি একটি পাকা সেতু। এখানকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল একটি কাঠের সেতু। কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে বানানো সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হলেও সম্প্রতি বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে সাঁকোটি। ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি হালদা নদীর নারায়ণহাট বাজার এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণ।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৬ কি.মি. উত্তরে ৩ নম্বর নারায়ণহাট ইউনিয়নকে দ্বিখণ্ডিত করেছে খরস্রোতা হালদা নদী। নদীর দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে জমিদার পাড়া, সুন্দরপুর, হাপানিয়া, রাজারটিলা, আনিচার খিল, খালাছি পাড়া, সন্দ্বীপ পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। নারায়ণহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, হাঁপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শামসুনাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণহাট ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস অন্যতম।
নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে—নারায়ণহাট বাজার, নারায়ণহাট ইউনিয়ন পরিষদ, নারায়ণহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, নারায়ণহাট ডিগ্রি কলেজ, কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা মাদ্রাসা, বাস স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। দৈনিক কয়েক হাজার মানুষকে পারাপার হতে হয় এ পথে।
শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পার হতে হচ্ছে হালদা নদী।
নারায়ণহাট কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল আফরিন বৃষ্টি বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা থাকে সকালে কীভাবে একা-একা সেতুটি পার হবো। ভয় কাজ করে, যদি নিচে পড়ে না যায়! আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই? যিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ভয়হীন চলাচলের জন্য একটি সেতু উপহার দিবে।’
নারায়ণহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘একটি সেতুর অভাবে এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর দুঃখের শেষ নেই, রয়েছে প্রতি মুহুর্তে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের একটি দাবি, যেন সেতুটি দ্রুত নির্মাণ হয়। সেতুটি নির্মিত হলে যাতায়াতে ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, ‘নারায়ণহাট বাজারের পাশে হালদা নদীতে একটি বেইলি ব্রিজের জন্য প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। সয়েল টেস্ট পাঠানো আছে, বরাদ্দ পেলে নির্মাণ কাজ শুরু করবো।’
ডিজে