চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলার আবেদনের শুনানিতে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবী বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এরপর চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের ছয় বিচারক এজলাস ছেড়ে যান।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাকের সঙ্গে বিচারকের বাগবিতণ্ডা ঘটে।
পরে বিচারকের বদলির দাবিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভও করেন।
জানা গেছে, নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকার বাসিন্দা সোয়াইবুল হক চৌধুরী গত ১৭ জুলাই মুরাদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে যান। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক।
আদালতের বিচারক এ সময় বাদির কাছে আসামিদের নাম জানতে চান। শুরুর দিকের প্রায় ১৫ জনের নাম বললেও বাকিদের নাম বলতে পারছিলেন না বাদি সোয়াইবুল। বাদির আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক তখন ‘এভাবে সব আসামির নাম বলা সম্ভব নয়’ বলে জানান।
এরপর বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন।
আদেশ দিয়ে এজলাস ছেড়ে চলে যান বিচারক অলি উল্লাহ। এরপর অলি উল্লাহসহ চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের ছয় বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।
মামলায় আসামিদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম, সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ডা. শফিউল আজম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, বিএমএর কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. আরিফুল আমীন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, স্বাচীপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমানের নামও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক জানান, ছাত্র আন্দোলনে ১৭ জুলাই মুরাদপুরের ঘটনায় আহত সোয়াইবুল হক চৌধুরীর একটি মামলার আবেদন নিয়ে আমরা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর আদালতে যাই। বাদির পিঠে এখনও গুলির ক্ষত আছে। সব জানিয়ে মামলাটি যাতে থানায় এফআইআর হিসেবে নেওয়া হয়, সেই আদেশ চেয়েছিলাম। এরপর নিয়ম অনুসারে বাদি শপথ নিয়ে আদালতকে ১২-১৪ জন আসামির নাম বলেন। কিন্তু বিচারক বাদির কাছে সকল আসামির নাম জানতে চান।
জেলা পিপি আশরাফ জানান, তখন আমি বলি, এত নাম বলা সময়ের ব্যাপার। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। সব নাম তো আসামি বলতে পারবে না। এরপর আবারও আদেশ চাই। এরপর বিচারক বলেন, ‘আমার কাজ আমাকে করতে দেন।’ তারপর তিনি মামলার আবেদনটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতাও জানাই। এসময় তিনি বলেন, ‘আমার কোর্টে জোর খাটানোর চেষ্টা করবেন না।’ তখন আমি বলি, ‘জোর কোথায় খাটালাম?’
আশরাফ আরও জানান, এরপর এজলাস থেকে নেমে তিনি সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) মহোদয়ের কাছে গেছেন। তারপর সিএমএম আদালতের সব বিচারক নেমে গেছেন। বিচারকরা এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর বিএনপি ও জামায়তপন্থি আইনজীবীরা চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় মহানগর হাকিম আদালতের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা পৌনে ২টায় বিক্ষোভরত আইনজীবীরা মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রবিউল আলমের খাস কামরায় আলোচনার জন্য যান।