১০ মিনিটের ‘নাটক’ শেষে চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ যেভাবে পাচ্ছে সমঝোতার কমিটি

মহাসমারোহে আয়োজিত সম্মেলনের পর দিন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি ঘোষণার কথা বেশ গুরুত্বসহকারে প্রচার করা হলেও শেষ পর্যন্ত সে কথাও রইলো না। নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হওয়া চট্টগ্রাম স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে অবশ্য নেতারা তৃপ্তি খুঁজছেন ভিন্ন জায়গায়। করোনা পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মত ভার্চুয়ালি করা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের এই সম্মেলন দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারার পথ দেখিয়েছে বলে মনে করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা

তবে নেতৃত্ব নির্বাচনে কোন্ পথে এগোচ্ছেন— এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যায়নি সংগঠনটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সাথে কথা বলে। জানা গেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আগের কমিটির আহ্বায়ক ও দুই আহ্বায়ক ঢাকা যাবেন। এর আগেই আলাদাভাবে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপ সেরে নেবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আগের কমিটির নেতাদের মতামত নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন তারা।

শনিবার (১৯ জুন) লালখানবাজার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দিনভর নানা বর্ণিল আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় বহুল আলোচিত এই সম্মেলন। সাবজেক্ট কমিটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি থাকলেও সেই দাবিও আলোর মুখ দেখেনি সম্মেলনে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথমবারের মত কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের ভার্চুয়াল সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সকাল ১১টায় ঢাকা থেকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংগঠনের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক উৎসব।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি পদে ৪৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩২ জন প্রার্থী ফরম জমা দেন। তাদের সকলকে ঐক্যমতে আসার জন্য ১০ মিনিটের সময় দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে ১০ মিনিটে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না হওয়াই দুই পদে ৭৫ জন প্রার্থীর নামের তালিকা নিয়েই ঢাকায় পথ ধরেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে যাওয়ার আগে ঘোষণা দিয়ে গেলেন চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজনীতির অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে কমিটি ঘোষণা করার।

সম্মেলনের পরদিন কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও সেটিও হয়নি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ফারুক আমজাদ খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২১ বছর অপেক্ষা করা গেছে, আরও কিছুদিন তো অপেক্ষা করাই যায়। সম্মেলন যেহেতু হয়ে গেছে, সেহেতু দ্রুত সময়েই নতুন কমিটি হবে।’

অন্যদিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক এডভোকেট জিয়াউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে আমাদের ঢাকা যেতে হতে পারে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা ইনডিভিজুয়ালি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করবেন। আমরা গেলে আমাদের সাথেও এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বসে পরামর্শ করবেন। আশা করছি খুব দ্রুত কমিটি হবে।’

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, দুই ধারায় বিভক্ত নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলোচনা করে এরই মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের একজনকে সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের একজনকে সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এমন হলে এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দেবাশীষ নাথ দেবু ও কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হেলাল উদ্দিনকে নিয়েই কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি। তবে এই প্রক্রিয়ার বাইরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির তিন নেতা মিলে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদেক হোসেন পাপ্পুকে সভাপতি করার বিষয়ে অনড় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

এছাড়াও সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল অনুসারী আজিজুর রহমান আজিজ ও লালখানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল। অন্যদিকে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে সুজিত দাশ, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও আব্দুর রশীদ লোকমানের নামও আলোচিত হচ্ছে।

আগের কমিটির নেতাদের ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পাপ্পু ছাড়াও আলোচনায় আছেন দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, আনোয়ার উদ্দিন বাপ্পী, অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, আজাদ খান অভি, নুরুল কবির ও শাহেদ আলী রানা। এছাড়া আলোচনায় আছে দেবাশীষ আচার্য্যের নামও। তিনি সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!