১০ ভাগ কাজ করেই দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রাঙ্গুনিয়ার ১৫ চেয়ারম্যান

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিকদের এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মাত্র ১০ ভাগ কাজ করেই৤ দুর্নীতির অভিযান চালিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে উপজেলার সাবেক ও বর্তমান দুই কর্মকর্তা, ১৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শ্রমিকদের প্রকল্পের পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

হটলাইন ১০৬ নম্বরে এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর একটি দল রাঙ্গুনিয়ায় গিয়ে অভিযান চালায়। দুদকের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশের নেতৃত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দিন ও শাহ আলম।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দুদক টিম জানতে পারে, ৪০ দিনের প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় তালিক্ভুক্ত শ্রমিকদের নিয়োগ না দিয়ে ১৫টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানরা নিজস্ব কয়েকজন লোককে নিয়োগ দেখিয়ে মাত্র ১০% কাজ করেছে। কিন্তু ওইটুকু কাজ করেই তারা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশিরভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে তুলে নেয়। এই জালিয়াতিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ছাড়াও তাদের সহায়তা দেয় স্থানীয় কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

অভিযুক্তরা হলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বাবুল কান্তি চাকমা, সাবেক পিআইও আবদুল জব্বার, দুই প্রকল্পের কমিটির সভাপতি আবদুল ছালাম সিকদার, তার স্ত্রী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহীন আরা, দক্ষিণ রাজাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহমেদ সাইয়েদ তালুকদারসহ ১৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজার।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়নে ৪০ দিনের প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় ১০৩ জন শ্রমিকের জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা করে মোট আট হাজার টাকা দৈনিক বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৪০ দিনে ১০৩ জন শ্রমিকের জন্য মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ১৫টি ইউনিয়নে এই বরাদ্দের মোট পরিমাণ ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, উপজেলা থেকে নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী শ্রমিকদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানরা তাদের নিজেদের কিছু লোককে নিয়োগ দেখিয়ে প্রকল্প কর্মসূচির অর্ধেকেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে—এমন প্রমাণ পায় দুদকের তদন্ত দল।

প্রায় চার ঘন্টার অভিযানকালে রাজাখালী ইউনিয়ন অফিস, বিভিন্ন দাপ্তরিক হিসাব-নিকাশ যাচাই, স্থানীয় মেম্বার ও তালিকায় থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দুদক টিম।

দুদকের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৪০ দিনের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মসূচির তালিকায় থাকা শ্রমিকদের নিয়োগ না দিয়ে নিজের কয়েকজন লোক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা পুরো একবছরের প্রকল্পের কাজ করেছে মাত্র ১০%। অভিযুক্ত ও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!