১০ বছর পর চট্টগ্রামের জনসভায় শেখ হাসিনা, উৎসবে মুখর নগরী

১০ বছর পর চট্টগ্রাম নগরীতে আয়োজিত কোন জনসভায় এলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় বিকেল তিনটায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে তার। এ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামে। সকাল থেকে জনসভায় অংশ নিতে লোকজন আসছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাগুলো থেকে। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ সমাবেশে যোগ দিতে মহানগর এলাকায় প্রবেশ করছেন।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জমায়েত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে তাদেরকে ব্যানার নিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

সকাল থেকেই দেখা যায়, নগরীর তিন প্রবেশ মুখ দিয়ে মিছিলে-স্লোগানে নেতাকর্মীদের স্রোত জনসভাস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লাল-সবুজ টি-শার্ট ও মাথায় ক্যাপ পরে পায়ে হেঁটে বা পিকআপ ভ্যান, ট্রাক ও বাসে বিভিন্ন সড়ক ধরে যেভাবে পারছেন, জনসভায় আসছেন নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে অনেকে গতকাল (৩ ডিসেম্বর) থেকেই অবস্থান করেছেন চট্টগ্রাম শহরে।

মহানগরের বিভিন্ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন মোড়ে। মিছিল নিয়ে সমাবেশমুখী তারা।

জনসভার স্থল পলোগ্রাউন্ডে গতকাল শনিবারই প্রস্তুত হয়েছে নৌকা আকৃতির ৩ হাজার ৫২০ বর্গফুট বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ। তৈরি মঞ্চটিতে বসতে পারবেন প্রায় ২০০ জন নেতা। পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার স্থলকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে বসবেন কারা সেটি চূড়ান্ত করবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এসএসএফ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী যে সব এলাকা দিয়ে জনসভাস্থলে পৌঁছাবেন এবং জনসভা শেষ করে ফিরে যাবেন সেসব এলাকাকে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লিখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণসহ নানা সাজসজ্জায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম।

দীর্ঘ ১০ বছর ৯ মাস পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক এই পলোগ্রাউন্ডে বক্তব্য রাখতে যাচ্ছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ–উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে।

এ কারণে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও দলের নেতারা নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। উপজেলা থেকে শহরের প্রতিটি অলিগলিতে দিনরাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন গত এক মাস ধরে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে দ্রুত পাল্টে গেছে বন্দরনগরীর চিত্র। পুরো নগরজুড়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা, রাতে করা হচ্ছে লাইটিং। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে।

জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। নগরীর তিন প্রবেশমুখ সিটি গেইট, শাহ আমানত সেতু ও হাটহাজারীতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য জনসভার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও পলোগ্রাউন্ডের চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘জনসভা ঘিরে সবধরণের প্রস্তুতি শেষ। প্রচার-প্রচারণায় দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সাড়া পেয়েছি। শুধু চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিন জেলার মানুষ নিয়ে জনসভা করা হবে। বাইরের জেলার অনেকে জনসভায় আসার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। তাদেরকে সরাসরি না করে দিয়েছি। যেটুকু সাড়া পেয়েছি এরমধ্যে পলোগ্রাউন্ড মাঠ ভর্তি হয়ে বিভিন্ন সড়ক লোকে লোকারণ্য হবে বলে আশা করছি।’

আরএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm