১০ বছর ধরে জরিমানা দিচ্ছে চট্টগ্রামের দস্তগীর হোটেল, নলায় এবার তেলাপোকা (ভিডিও)

২০১২ সাল থেকে গত ১০ বছর ধরে নিয়মিত জরিমানা দিয়ে আসছে চট্টগ্রাম নগরীর মোমিন রোডের দস্তগীর হোটেল। কিন্তু এদের স্বভাব কিছুতেই বদলাচ্ছে না।

প্রতিবারই দস্তগীর হোটেলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, সেগুলো হচ্ছে— রান্না ঘরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নোংরা পাত্রে খাবার তৈরি ও সংরক্ষণ করা, উৎপাদিত খাদ্য খোলা অবস্থায় রাখা এবং খাদ্যপণ্য সংরক্ষণে ছাপানো নিউজপ্রিন্ট ব্যবহার, রং‌ দেয়া মটর ব্যবহার, পোড়াতেল দিয়ে খাবার ভাজাসহ আরও নানা অভিযোগ।

এসব অভিযোগে সেই ২০১২ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই এই হোটেলটিকে জরিমানা করে আসছে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু দেখা যায়, জরিমানা দিয়েই হোটেলটি আবার পুরনো অভ্যাসে ফিরে যায়।

গ্রাহকদের অভিযোগ, হোটেলটির পরিবেশ সব সময় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকে, খাবারের মানও জঘন্য। প্রায় সময়ই নোংরা-বাসি-পচা খাবার গ্রাহকদের পরিবেশন করা হয়। এসব নিয়ে কিছু বললে কাউন্টারে বসা ম্যানেজাররা গ্রাহকের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এমনকি মারধর করতেও তেড়ে আসেন।

সর্বশেষ গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দস্তগীর হোটেলের গরুর নলায় পাওয়া গেল তেলাপোকা। ব্রিবতকর সেই অবস্থার কথা জানিয়ে ফেসবুকে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, ‘সকাল ৬টায় বন্ধুকে নিয়ে দস্তগীরে যাই নেহারী খাওয়ার জন্য। আমরা নলা এবং নেহারী অর্ডার করি এবং নলার বাটির মধ্যে পেলাম মরা তেলাপোকা। সাথে সাথেই তাদের দেখালাম এবং তারা আমাকে খাবার বদলে দেয়ার জন্য বলে এবং বাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে। পরে যখন ক্যাশ ম্যানেজারকে জানাই। দেখলাম, উনার কাছে এটা কোন ব্যাপার ছিল না। আমাদেরকে বলে এটা নাকি উড়ে এসে পড়েছে। কিন্তু ছবি/ভিডিওতে ভালো করে দেখা যায় ওই তেলাপোকা রান্না করা। ম্যানেজারের ব্যাবহার দেখে মনে হয়েছিল তেলাপোকা নিয়ে অভিযোগ করে আমরা অপরাধ করেছি।’

ওই ভুক্তভোগী বলেন, ‘মানুষের একবার ভুল হতে পারে এবং তা মানা যায়। কিন্তু সবসময় ভুল হবে এটা ভুল না। এটা তাদের দোষ এবং উদাসীনতা।’

এর আগে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঝটিকা অভিযানে দস্তগীর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টকেও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করে দেওয়া হয়। দস্তগীর হোটেলে নোংরা পাত্রে খাবার তৈরি ও সংরক্ষণ করা, উৎপাদিত খাদ্য খোলা অবস্থায় রাখা এবং খাদ্যপণ্য সংরক্ষণে ছাপানো নিউজপ্রিন্ট ব্যবহার করার প্রমাণ হাতেনাতে পান ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা।

২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষ‌ণে সংবাদপত্র ব্যবহার, রং‌ দেয়া মটর ব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দস্তগীর হো‌টেলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অ‌ধিকার সংরক্ষণ অ‌ধিদপ্তর চট্টগ্রামের একটি টিম।

একই বছরের ২৫ আগস্ট সকালে দস্তগীর হোটেলে কয়েকজন ব্যক্তি নাস্তা করতে গেলে নেহারির সাথে গরুর নাড়িভুঁড়ি ও দড়ি দেখতে পান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিলে দস্তগীর হোটেলের খাবারের মান নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেই ভুক্তভোগী নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে লিখেন, ‘আজ ফজরের পর ১০ জন বন্ধু মিলে (অনেক বছর পর প্রবাসী বন্ধুদের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে) সেই বহুল আলোচিত দস্তগীর হোটেলে খেতে গেলাম। নলা না থাকার কারণে আমরা অর্ডার করেছিলাম নেহারি। খাবারের জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন খাবার আসলো তা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে তীব্র দুর্গন্ধ ও তিতা স্বাদ মুখে লাগলো এবং আমাদের দুই বন্ধুর প্লেটে (আমরা সব মোট ৫ প্লেট নেহারি অর্ডার করেছিলাম) আমরা পেলাম গরুর ভুঁড়ির উপরের আস্তরণ, গরুর চামড়া এবং পাকস্থলীর অখাদ্য অংশ। যেগুলো কিনা আবার দড়ি দিয়ে সংযুক্ত ছিল। আশেপাশের সব টেবিলের মানুষজনের কাছ থেকেও বিভিন্ন কমপ্লেইন। হোটেল কর্তৃপক্ষ তা পাত্তাই দিচ্ছিল না। উল্টো বলে এগুলো কোন ব্যাপার না, খেলে খান না খেলে যা খেয়েছেন তার বিল দিয়ে চলে যান!!’

এমন অভিযোগের দুইদিনের মাথায় হোটেলটিতে অভিযান চালায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে দস্তগীর হোটেলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতেও দস্তগীর হোটেল নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য পরিবেশন ও সংরক্ষণের দায়ে জরিমানা দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই সময় হাতেনাতে প্রমাণ পায়, হোটেল দস্তগীরের রান্নাঘর অপরিচ্ছন্ন। সেখানে খাবার রান্না করা হচ্ছে। এছাড়া ফ্রিজে নোংরা ও অপরিস্কার পরিবেশে মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ দিনের মধ্যে রান্নাঘরে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরির নির্দেশ দিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে।

একই বছরের ২১ জুন হোটেলটিকে আবার জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানকালে দেখা যায়, পুরাতন বাসি ইফতার সামগ্রী ও হালিম পুনরায় ব্যবহার, পোড়াতেল দিয়ে ইফতার ভাজা, রান্না ঘরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ফ্রিজে রান্না করা ও কাঁচা মাছ-মাংস একসাথে সংরক্ষণ করা হচ্ছিল।

২০১২ সালেও মোমিন রোডের এই হোটেলকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতের দায়ে জরিমানা করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (সিসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাল আবদিনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!