হেফাজতের সম্মেলনের আগে রহস্যময় লিফলেট হাটহাজারী মাদ্রাসায়

বাবুনগরী-সাঈদী পুত্রের যুগল ছবি আবার আলোচনায়

হেফাজতের কাউন্সিলকে ঘিরে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে ‘অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন’ হেফাজতে ইসলামের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-বিভেদ। সংগঠনটির প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে আহমদ শফীর অনুসারীদের হটিয়ে হাটহাজারীর প্রভাবমুক্ত হেফাজতের নতুন কমিটি করতে জামায়াতে ইসলামী পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে— এমন দাবি তুলেছে শফি অনুসারীরা। এবার সেসব দাবি সম্বলিত লিফলেটও বিলি হলো হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকায়।

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) জুমার নামাজের পর হাটহাজারী মাদ্রাসা গেইটে বিলি করা এসব লিফলেটের একটিতে জুনায়েদ বাবুনগরী ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র শামীম বিন সাঈদীর একটি ছবি দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসায় মানবতাবিরোধী সাজাপ্রাপ্ত আসামী সাঈদী পুত্র শামীম সাঈদীর আনাগোনা— এ কিসের ইঙ্গিত।’

এছাড়াও হেফাজতে ইসলামকে হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রভাবমুক্ত করতে আল্লামা শফীর ঘনিষ্ঠদের বাদ দিয়ে হেফাজতের কমিটি করতে জামায়াত শিবির ষড়যন্ত্র করছে বলেও এসব লিফলেটে দাবি করা হয়।

অন্য একটি লিফলেটে লেখা হয়েছে, ‘ধর্মপ্রাণ ও অরাজনৈতিক হেফাজতকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহাতের ষড়যন্ত্রে মরিয়া জামায়াত-বিএনপি।’

তবে কে বা কারা এই লিফলেট বিলি করেছে সে বিষয়ে কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাটহাজারী মাদ্রাসার একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জুমার নামাজের পর পরই এসব লিফলেট মুসল্লিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কারা বিলি করেছে তা বলতে পারছি না। আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে লিফলেট বিলিকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে বলে শুনেছি।’

তবে এই বিষয়ে কথা বলতে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত আগামী ১৫ নভেম্বর হেফাজতের কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন হেফাজত থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তবে কোন নিয়মনীতি না মেনে জামায়াতি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটিকে পাশ কাটিয়ে হেফাজতের গুটিকয়েক নেতা এই সম্মেলনের আয়োজন করছেন জানিয়ে এই সম্মেলনের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর ঘনিষ্ঠ হেফাজত নেতারা।

এদিকে জুনায়েদ বাবুনগরী ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র শামীম বিন সাঈদীর ‘বৈঠক’ প্রসঙ্গে এর আগে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছিলেন, সেটা আদৌ জামাত-শিবিরের কোন মিটিং ছিল না। এটা ছিলো এসএমএম কুরিয়ার সার্ভিস নামের একটি কোম্পানির ইফতার মাহফিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেখানে ছিলেন। জুনায়েদ বাবুনগরী দাবি করেন, ওই ইফতার মাহফিলে শামীম সাঈদীর উপস্থিতিতে তিনি বিব্রতবোধ করছিলেন। মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীও শামীম সাঈদী উপস্থিত হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন।

বাবুনগরীর সেক্রেটারি ইনআমুল হাসান ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে একজন ব্যক্তি আসলো। আমরা তাকে চিনতাম না। উপস্থিত অফিসের একজন ডাইরেক্টর (যিনি আওয়ামী লীগ নেতা) জানালেন, তিনি আল্লামা সাঈদীর ছেলে ‘শামীম সাঈদী’। শামীম সাঈদী এ সময় বাবুনগরী হুজুরের পায়ের কাছে বসেন। তিনি পাশে বসা অবস্থায় ওনার এক সহকারী সকলের অজান্তে দুজনের একটি ছবি তুলে ফেলেন। বিষয়টা জানতে পেরে তার বাবুনগরী হুজুর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন এবং ছবিটি মুছে ফেলতে বলেন। কিন্তু শামীম সাঈদী বললেন, ছবিটা শুধু স্মৄতি হয়ে থাকবে। অন্য কিছু না। তখন উপস্থিত আজীজুল হক ইসলামাবাদী, আমি (ইনআমুল হাসান) তাকে ছবিটি ডিলিট করার জন্য বললে তিনি বললেন— ‘আচ্ছা ডিলিট করে দিচ্ছি’। কিন্তু তিনি তা ডিলিট করেন নাই।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm