হুমকি দিয়ে ‘পাওয়ার’ দেখালেন পিএইচপির এমডি ইকবাল— ২৩ মিনিটের কলরেকর্ড, ৭৯ এসএমএস
সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, ডিজিএফআইয়ের নাম দিয়ে হুমকি
চট্টগ্রামে পাহাড়ের টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়া বন্ধ করে দেওয়ার পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাসের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই মামলার খবর প্রকাশ করার পর পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইকবাল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মাকে টানা দুই দিন ফোন করে অশালীন ভাষায় হুমকি দেন। এ সময় তিনি সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ছাড়াও বহুবার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের নাম ব্যবহার করে সরাসরি তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া তিনি একই ধরনের হুমকি দিয়ে অন্তত ৭৯টি এসএমএস বা ক্ষুদে বার্তা পাঠান তার মোবাইল নম্বর থেকে।
ইকবাল হোসেন পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সম্প্রতি একুশে পদকপ্রাপ্ত মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার অনারারি কনসালও।
গত ৪ মার্চ চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চট্টগ্রামে পাহাড়ের টিলা কেটে সর্বনাশা বাঁধ, ইকবালসহ পিএইচপির তিনজন মামলার জালে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়ের করা মামলার বরাত দিয়ে সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড়ের টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি খাল বা ছড়ার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে পিএইচপি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস তৈরি করে কৃত্রিম জলাধার— যা দিয়ে তাদের আমের বাগানে পানি দেওয়া হচ্ছিল। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের ছড়া ব্যবহার করতে না পেরে এলাকাবাসী পড়ে গেছে চরম ভোগান্তিতে। মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে খালের ওপর বাঁধ দিয়ে সেই পানি নিজেদের কাজে ব্যবহার করার এমন ঘটনা জেনে পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিন অনুসন্ধানে যায়। এরপর ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত মুচলেকা দেওয়ার পরও সেই বাঁধ না সরানোয় শেষ পর্যন্ত পিএইচপির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড পাহাড়ে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানার পূর্ব পাশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের নির্দেশে এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে থানায় দেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগে বলা হয়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের করা মামলায় পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, কারখানার আমবাগান প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলফাতুন ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চক্রবর্তীকে আসামি করা হয়।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনে খবরটি প্রকাশের পর ৮ মার্চ দিবাগত রাত ২টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিজের মোবাইল নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন করেন পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করে অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় হুমকি দিয়ে যান ক্রমাগত। শুরুতেই তিনি ক্ষিপ্ত ভাষায় জানতে চান, চট্টগ্রাম প্রতিদিনে কেন নিউজটা প্রকাশ করা হয়েছে?
এর পরপরই পিএইচপি গ্রুপের এমডি ইকবাল হোসেন অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় তিনি একাধিকবার গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন— ‘ছাগলের বাচ্চা তিন মিনিট লাগবে না তােরে তুলে নিয়ে আসতে।’
চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রকাশকের ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে ইকবাল হোসেন সাম্প্রদায়িক বিষোদগারও করেন এই বলে— ‘আমি মুসলমাইন্না, তুই এদেশে থাকতে পারবি না, কচু কাটা করবো তােমাকে শুয়ােরের বাচ্চা।’ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘যে অ্যামবেসিই ধরো, তুমি মনে হয় আমার কানেকশন জান না…।’
এর একপর্যায়ে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দায়ের করে জেল খাটানো ছাড়াও আর্থিকভাবে হয়রানি করারও হুমকি দেন। মোবাইল ফোনে রাতভর হুমকি-ধমকি-গালিগালাজের পর চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মা তার মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে পিএইচপির এমডি ইকবাল হোসেন এরপর ক্রমাগত এসএমএস বা ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে থাকেন। পরবর্তী কয়েক ঘন্টায় তিনি মোট ৭৯টি এসএমএস পাঠান— যার সবকটিতেই ছিল মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও প্রাণে মারার হুমকি।
এ সময় তিনি পিএইচপি গ্রুপের মালিকানা ও পরিচালনায় থাকা এটিএন বাংলা ও আমাদের সময়সহ ৪-৫টি টিভি ও পত্রিকায় চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রকাশকের নামে মিথ্যা খবর প্রকাশেরও হুমকি দেন।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইকবাল হোসেনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন আয়ান শর্মা।
পিএইচপি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইকবাল হোসেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশক আয়ান শর্মার মোবাইল কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ এখানে প্রকাশ করা হল।
আয়ান : হ্যালো
ইকবাল : হে, আমি ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলতেছি পিএইচপি থেকে।
আয়ান : জ্বি, কেমন আছেন?
ইকবাল : না ভালো নাই তো।
আয়ান : আচ্ছা।
ইকবাল : আমারে তো নায়ক মার্কা ছবি দিলেন। ভালো কিভাবে থাকবো? হু?
আয়ান : নায়ক মার্কা ছবি দিছে কে বলেন না, আপনার এখানে কোন যদি ইয়া থাকে। কোন বক্তব্য থাকে আপনি প্রতিবাদ দিয়ে দিয়েন। অসুবিধা নাই।
আমি মুসলমাইন্না। তুমি এই দেশেই থাকতে পারবে না…
যে অ্যামবেসিই ধরো, তুমি মনে হয় আমার কানেকশন জান না…
ইকবাল : আপনি কোন্ দিকের কী খাইতে চান আমাকে বলেন?
আয়ান : কী, বুঝি নাই।
ইকবাল : না, বুঝার দরকার নাই, আপনি রেকর্ডিং করেন ফোন। আমি মানহানির মামলা একটা আগামীকাল করতেছি আপনার নামে। কয়বার কোর্টে দৌড়াইবেন? তোমার টাকা আছে, অতোগুলা খরচ করার? দাঁড়ান আমি ডিজিএফআইরে ফোন লাগাচ্ছি দাঁড়ান। ডিজিআইএফ ফোন লাগাইয়া, আমার ডিজিএফআই থেকে ফোন আসছে এখন আমার কাছে। ডিজিএফআইরে ফোন লাগাইয়া এখন তোমাকে কথা শুনাচ্ছি। ওরে ছাগলের বাচ্চা আমার তিন মিনিট লাগবে না তোরে তুলে নিয়ে আসতে। ডিজিএফআই থেকে এখনও ফোন আসছে তোর কাছে? তোরে আমি তুলে নিয়ে আসবো কুত্তার বাচ্চা। তুই কার সাথে লাগছোস বুঝস নাই।
আমি মুসলমাইন্না। তুমি এই দেশেই থাকতে পারবে না। শুন… তুমি যে অ্যামবেসি দিয়েই ধরো, তুমি মনে হয় আমার কানেকশন জান না? আর যেটা বেয়াদবি করছো। তোমারে আমি নেংটা তিনটা নিউজ পেপারে আর তিনটা টিভি চ্যানেলে রিপোর্ট দিচ্ছি কালকে। তারপর তুমি মামলা লাগাইও আমার পেছনে। এরপর কোর্টে দৌড়াইয়া টাকাও খরচ কর। ঠিক আছে?
হেলিকপ্টার নিয়ে যাব। আর তুই যাবি বাসে…
আয়ান : আমি কী বেয়াদবি করলাম?
ইকবাল : আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি আজকে। আমি তিনটা নিউজ পেপারে আমি তোমাকে নেংটা করবো। হ্যাঁ? আর টিভি চ্যানেলসহ। এরপর তুমি আমার বিরুদ্ধে মামলা করিও। তারপর তুমি কত টাকা খরচ করতে পার দেখবো। চ্যালেঞ্জ নাও আজকে। বাপের বেটা হইলে চ্যালেঞ্জ নাও।
আয়ান : আমি চ্যালেঞ্জ কেন নেবো আপনার সাথে?
ইকবাল : না না তোমার চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। চার তারিখ তুমি আপলোডিং করছো, আজকে আমি জানছি ডিজিএফআই থ্রুতে— যে ইকবাল ভাই এটা কী নিউজ আসছে? এটা কি এখন ভ্যানিশ করবা, নাকি করবা না? নাকি দরকার নাই মনে কর? তাইলে কালকে থেকে কোর্টে কিন্তু অনেক দৌড়াইতে হবে। চারটা মামলা হবে কিন্তু।
আয়ান : ঠিক আছে দাদা আমি রাখতেছি, দোয়া করিয়েন।
ইকবাল : কোথায় রাখতেছো?
আয়ান : না টেলিফোনটা রাখতেছি। আপনি তো শুধু আমাকে চ্যালেঞ্জ নিতে বলতেছেন।
ইকবাল : আর তোমার চেয়ে বড় বড় লোক আমার কাছে রাখা আছে। আর আমি তোমাকে গাথায়নি। আজকে থেকে গাথানি শুরু করবো তোমারে আমি। তুমি যদি অতো বড় হয়ে থাক সাংবাদিক, মাপ চাইবো।
আয়ান : আমি কেন বড় সাংবাদিক হব, আর এখানে মাপ চাওয়ার কী আছে?
ইকবাল : না তুমি অনেক বড় সাংবাদিক।
আয়ান : এখানে মাপ চাওয়ার কী আছে? আপনার সাথে তো আমার ব্যক্তিগত সমস্যা না।
ইকবাল : না না তুমি তো চিটাংগা, তোমার নামে চারটা মামলা হবে, তুমি যে না জেনে কাজ করছো। এরপর তোমার কোর্টে হাজিরা দিতে হবে। রেডি হইয়া যাও। এরপরে তো তুমি কোথা থেকে ডাক পাবা, এটা তুমি বুইঝা নিও আজকে। ঢাকা থেকে ডাক পাবা। চিটাংয়ে না। ইউ ক্যান নট ম্যানেজ এনিবডি ইন চিটাগং। তুমি ঢাকা থেকে ডাক পাবা। তোমারে আমি হোয়াটসঅ্যাপটা পাঠাইলাম না, উনি কী লিখছে। কারণ এটি তুমি মিডিয়া করবা। বাট তুমি কালকে অফিসে আসলে তোমাকে দেখাবো কী লিখছে।
আয়ান : কে লিখছে যে দাদা প্লিজ?
ইকবাল : তোমার… নাম জানার দরকার আছে? আমি কোন্ কানেকশনে চলি তুমি জান? তুমি কি বাংলাদেশের টাইকুন মিডিয়া হয়ে গেছ? মাহফুজুর রহমান সুন্দর করে গান গায়। ও টাইকুন হতে পারে না। তুমি কোন্ টাইটান হইছো? এহ্? বার তারিখে দাওয়াতে চিটাগাং চলে আসতেছে পুরা মিডিয়া টিম নিয়ে। ও না শুধু। সব আসতেছে। ঢাকা টাউনের সব বড় বড় কুতুব। তোমার সাথে আমার কিন্তু আজকে পাঙ্গা লেগে গেলো। মনে রাইখো। কচু কাটা করবো, কচু কাটা। মিডিয়া দিয়া কচু কাটা করবো। আমি যখন চারটা মামলা দিব। আগের মামলা তো আছেই। এর পেছনে দৌড়াতে পারবা? তোমার যেখানে যাইয়া কেস করার কর। আমি যশোর যাব দরকার হইলে। হেলিকপ্টার নিয়ে যাব। আর তুই যাবি বাসে। মাপ চাইতে পারবি, নাকি চাইতে পারবি না? আমি কি দৌড়াবো তোরে? কালকে ডিজিএফআই অফিস থেকে তোকে কল করবে, তুই যাই উত্তর দিস। ঠিক আছে?
আয়ান : ঠিক আছে।
ইকবাল : হেইত্!
আমার ডিজিএফআই থেকে ফোন আসছে… যে ভাইয়া, আমি কি তুইলা নিয়া আসবো?
আয়ান : ঠিক আছে। আপনি তো সব বলতেছেন।
ইকবাল : হে, ঠান্ডা মাথায় কথা বলো না। শুন? আমি ঠান্ডা মাথায় যখন মারি, তুমি বুঝবাও না কোন্ দিকে মারি। ক্ষমা চাইবা? নাকি কালকে তোমাকে ধইরা নিয়ে যাবো? তুমি চ্যালেঞ্জ রাখ আমরা সাথে, চ্যালেঞ্জ রাখ।
আয়ান : আমি কেন চ্যালেঞ্জ রাখবো?
ইকবাল : তুমি চ্যালেঞ্জ রাখবা আজকে আমার সাথে।
আয়ান : আমি চ্যালেঞ্জ কেন করবো? আপনি পারবেন, আপনার ক্ষমতা আছে। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমতা দিছে।
ইকবাল : না আজকে এটা তোমার চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
আয়ান : না আমি কেন চ্যালেঞ্জ করবো আপনার সাথে?
ইকবাল : এটলিস্ট তোমার চ্যালেঞ্জ করতে হবে। না, আমি কিন্তু কালকে তোমাকে তুলে নিয়ে যাব।
আয়ান : তুলে নিয়ে যেতে পারবেন, এটা আপনার ক্ষমতা আছে।
ইকবাল : তুলে নিয়ে যাব, কারণ তুমি বেহায়াপনা করছো। আমার ডিজিএফআই থেকে ফোন আসছে।
আয়ান : জ্বী জ্বী।
ইকবাল : যে ভাইয়া, আমি কি তুইলা নিয়া আসবো?
আয়ান : ঠিক আছে, আমি রাখতেছি তাহলে। বলছেন আমি শুনছি।
ইকবাল : তার মানে তুমি ইয়া করবা না? মাফ চাবে না?
আয়ান : বুঝি নাই।
ইকবাল : তোমার এটা মাপ চাওয়ার দরকার নাই মনে করতেছো?
আয়ান : না না মাপ চাবো কেন? আপনি যদি এখানে কোন ভুল থাকে অবশ্যই প্রতিবাদ দিবেন।
ইকবাল : তুমি কালকে ডিজিএফআই অফিসে বসবা আমার সাথে, কাল সকালে ঢাকায় চলে আসো। তোমার নামে কমপ্লেইন কী করছি তুমি জান। কী রিপ্লাই আসছে দিচ্ছি আমি ডিজিএফআইয়ের।
আয়ান : আচ্ছা ঠিক আছে প্লিজ।
ইকবাল : হু, দেখে একটু শিক্ষা নিও।
আয়ান : ঠিক আছে।
অধিকার না, ‘পাওয়ার’ আছে…আমি বাদশা নামদার…
ইকবাল : ইয়া, আপনে কালকে যে নিউজটা দিছেন ওটা উইথড্র করছেন? নাকি আপনি ঠিক আছেন আপনার নিউজে?
আয়ান : দাদা আমি আপনাকে দুয়েকটা কথা বলি প্লিজ? আমাকে একটা মিনিট সময় দেন। আপনি কালকে রাত থেকে অনেক কথা বলছেন। আমি শুনছি।
ইকবাল : আপনাকে তুলে নিয়ে আসবো, আপনি দেখবেন।
আয়ান : না না। আপনি তুলে নিয়ে যান। আপনার সেই ক্ষমতা আছে।
ইকবাল : অধিকার না, পাওয়ার আছে।
আয়ান : আমি মানি। কিন্তু আপনি গতকাল রাতে একাধিকবার একটা সংস্থার নাম ব্যবহার করতেছেন। এটা কেন? এ দেশ তো আমার অধিকার নাই সেটা বলে নাই? এই দেশ তো বঙ্গবন্ধুর দেশ, শেখ হাসিনার দেশ। আপনি এই ধরনের কথা বলতেছেন কেন? আপনি কেন একটা রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক সংস্থার নাম ব্যবহার করতেছেন বলেন? আর আপনি আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলতেছেন কেন? হিন্দু-মুসলমান নিয়ে। এটা কি হিন্দু-মুসলমান কিছু নিয়ে নিউজ ছিল? আমি গতকালকের আপনার কোন কথার জবাব দিই নাই। কারণ আপনি অস্বাভাবিক ছিলেন। কিন্তু এখন দেখলাম আপনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতেছেন।
ইকবাল : না না, সব কথার মধ্যে আমি এখনই চ্যালেঞ্জ লাগাইলাম।
আয়ান : আপনি চ্যালেঞ্জ লাগাচ্ছেন, আমি চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি না। আপনার ক্ষমতা আছে ভাই। আপনি করতে পারেন। আপনার ক্ষমতা আছে করেন। কিন্তু হাতজোড় করে বলতেছি আপনি রাষ্ট্রীয় সংস্থার নামটি ধরবেন না।
ইকবাল : আমি বাদশা নামদার। তুমি অনারারি কনসালের বিরুদ্ধে মামলা করছো।…
ফোন না ধরলে ইনভাইট করতে হয় কুত্তার বাচ্চা
আয়ান : আমি আপনাকে চারবার ফোন করছি।
ইকবাল : ফোন করলে ফোন না ধরলে ইনভাইট করতে হয় কুত্তার বাচ্চা।
আয়ান : আমি শুনছি। কারণ আমি আপনাকে জবাব দেবো না। আপনি বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড় আর আপনি রাষ্ট্রীয় একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী। সবকিছুই পারবেন আপনি। আর বিষয়টি আমার একটা রিকোয়েস্ট আপনি আমাকে তুলে নিয়ে যান।
ইকবাল : আমার ছবিটা যে তুললা।
আয়ান : আমি দাদা বলি আপনি তুলে নিয়ে যান, তুলে নিয়ে যান।
ইকবাল : এই আমাকে আগে কথা বলতে দাও।
আয়ান : না, গত রাত থেকে আপনি অনেক কথা বলছেন। আপনি ধর্মের আঘাত করতে পারেন না। আপনি আমাকে মানুষ হিসেবে নিয়ে যান। আপনি কেন হিন্দু আর মুসলিমের কথা তুলবেন, বলেন?
ইকবাল : তোমাকে ওইটার উত্তর দেবে চন্দন সিনহা আর মুন্নী সাহা উত্তর দিবে। আমি তোমাকে বলে রাখি এটার উত্তর তোমাকে চন্দন সিনহা আর মুন্নী সাহা উত্তর দেবে।
হয়রানির চেষ্টা আগে থেকেই
এর আগে সীতাকুণ্ডের স্থানীয় এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের বরাত দিয়ে জনচলাচলের রাস্তা দখল করা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর চট্টগ্রামের আদালতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একই দিনে পর পর তিনটি মামলা দায়ের করে পিএইচপি গ্রুপ। এসব মামলায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখার ও প্রকাশক আয়ান শর্মাকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে একই দিনে একই অভিযোগে একই বাদি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পৃথক দুটি কোর্টে মামলা করেন। পরে পিএইচপির দায়ের করা একটি মামলা চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক খারিজ করে দেন।
স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি
প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে দ্বিমত থাকলে প্রতিবাদলিপি পাঠানো যায়, এমনকি প্রেস কাউন্সিলেও প্রতিকার চাওয়ারও সুযোগ আছে। এরপরও কেন মামলা দিয়ে হয়রানি ও প্রাণে মারার হুমকি— এ প্রসঙ্গে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখার বলেন, ‘এ ধরনের প্রকাশ্য হুমকি ও মামলায় জড়িয়ে হয়রানির চেষ্টা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মুক্ত সাংবাদিকতা নিয়ে বারবার কথা বলছেন, সেখানে এ ধরনের মিথ্যা মামলা ও প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করার চেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকে অবমাননা করার শামিল।’
তিনি বলেন, ‘মামলা হোক বা হুমকি দেওয়া হোক আমরা নতি স্বীকার করব না। সত্য প্রকাশে আমরা অবিচল থাকবো।’
সিপি