হুমকির মুখে ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন সাতকানিয়ার তিন আইনজীবী
‘৫০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেনি’
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে হুমকির মুখে বৈধ মনোনয়ন জোর করে ‘প্রত্যাহার’ করানো হয়েছে অন্তত তিনজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে। তাদের বাসা ও চেম্বারে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। আইনজীবী সমিতির ৫০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেনি বলে জানিয়েছেন এর সদস্যরা। আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারিত রয়েছে।
হুমকির মুখে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে ‘বাধ্য’ হওয়া ওই তিন প্রার্থী হলেন— সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির প্রবীণ সদস্য সভাপতি পদপ্রার্থী এডভোকেট মিনহাজুল আব্রার, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এডভোকেট আবুল কাশেম এবং পাঠাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক সৈয়দ শওকত আলী।
প্রাণনাশের শঙ্কায় এই তিন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর পর আইনজীবী সমিতির মোট ১৩টি পদে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রইলো না।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। কিন্তু তার আগেই একই পদের অন্য প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে একদল লোক এডভোকেট আব্দুল কাশেমের চেম্বারে তাকে হুমকি দিয়ে আসে। তারা এ সময় ওই আইনজীবীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা না হলে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আবুল কাশেমের মতো একইভাবে সভাপতি পদপ্রার্থী সিনিয়র আইনজীবী মিনহাজুল আব্রার এবং পাঠাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক সৈয়দ শওকত আলীও একই কায়দায় মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়।
সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, পাঠাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে ঐক্য পরিষদের প্রার্থীগণের বিপরীতে প্রার্থী হিসাবে যথাক্রমে এডভোকেট মিনহাজুল আব্রার, এডভোকেট আবুল কাসেম এবং সৈয়দ শওকত আলী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
এই তিন প্রার্থীর বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন— সভাপতি পদে এডভোকেট মোহাম্মদ সোলাইমান, সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট হাফিজুল ইসলাম মানিক এবং পাঠাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে এডভোকেট শিহাব উদ্দীন।
এই তিন পদ ছাড়াও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্য যেসব পদে ‘নির্বাচিত’ হতে যাচ্ছেন— সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট মাহমুদুল হক চৌধুরী, সহ-সভাপতি এডভোকেট এএম ফয়সাল, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হাফিজুল ইসলাম মানিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, অর্থ সম্পাদক এডভোকেট আবুল কালাম চৌধুরী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এডভোকেট এমদাদ উল্লাহ এবং নিবাহী সদস্য— এডভোকেট এস. এম. রেজাউল করিম, এডভোকেট রাজিয়া সোলতানা, এডভোকেট আবদুল লতিফ, এডভোকেট হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, এডভোকেট আবদুর রহিম।
মনোনয়ন প্রত্যাহারে হুমকি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির প্রবীণ সদস্য এডভোকেট আবুল কাসেম বলেন, ‘আমি সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জেনারেল সেক্রেটারি পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। সিনিয়র বিজ্ঞ আইনজীবী মিনহাজুল আব্রার সাহেব সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন এবং এডভোকেট শওকত আলী তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন। অপরপক্ষের পাঠানো দুজন ব্যক্তি আমার চেম্বারে এসে আমাকে সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করতে নিষেধ করে ও বিভিন্ন প্রকার কথাবার্তা বলে চলে যায়। কিন্তু পরের দিন আদালত প্রাঙ্গণে মারাত্মক খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করে। সরকার পতনের পর এমন পরিস্থিতি আমি কখনও কল্পনা করি নাই! এটা সাংবিধানিক অধিকার হরণের শামিল। সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী ইতিহাসে ও বাংলাদেশের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ইতিহাসে স্বাধীনতার পর এই প্রথম আইনজীবী সমিতিতে কলংকময় অধ্যায় রচিত হইল।
এডভোকেট আবুল কাসেম বলেন, ‘এই নির্বাচনের মারাত্মক ও ভয়াবহ এবং সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশ দেখে সিনিয়র আইনজীবী মিনহাজুল আব্রার সাহেব সভাপতি পদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। এডভোকেট শওকত আলী তথ্যপ্রযুক্তি পদ থেকে এবং আমি সেক্রেটারি পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করি। এর মাধ্যমে সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় কলংকময় অধ্যায় রচিত হল।’
এদিকে এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসাইন হিরু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রিসিভিং ছাড়া যেসব চিঠি আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখছি, এ ধরনের কোনো চিঠি নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত কারণ বা দলীয় সিদ্ধান্ত দেখিয়ে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন। নির্বাচন কমিশন বিধি অনুসারে আবেদনগুলো গ্রহণ করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। এখানে জোরপূর্বক কিছু ঘটেনি। তাছাড়া কেউ যদি তাদের হুমকিও দিয়ে থাকে, সেটাও তো তারা আমাদের জানায়নি।’
সিপি