হুতিদের বন্দিশালা ছেড়ে চট্টগ্রামের ৫ নাবিক এবার দেখবে দেশের মুখ

পাঁচজনই চট্টগ্রামের লোক। মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের হাতে এই পাঁচ নাবিক আরও ১৫ জনসহ মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি ছিলেন টানা নয় মাস। বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎপরতায় অবশেষে এই নাবিকরা হুতি বিদ্রোহীদের হাত থেকে মুক্ত হলেন। ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি হোটেলে সেই থেকে তাদের রাখা হলেও শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) এই নাবিকদের ইয়েমেনের সরকার নিয়ন্ত্রিত শহর এডেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে আগামী সপ্তাহেই চট্টগ্রামের বাসিন্দা ওই পাঁচ নাবিক দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

হুতি বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি থাকা পাঁচ নাবিক হলেন— মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ ইউসুফ, রহিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আলমগীর ও আবু তৈয়ব। ওমানের ‘মাসিরা’ নামের একটি জাহাজ কোম্পানিতে কাজ করতেন তারা। চট্টগ্রামের এই বাসিন্দারা ভিনদেশী আরও ১৫ নাবিকসহ একটি নির্মাণকাজে যোগ দিতে ওমান থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

সৌদি আরবের ইয়ানবু বন্দরে পৌঁছানোর পর এই নাবিকেরা খবর পান লোহিত সাগরে একটি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। সেই জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার করার জন্য তাদের জাহাজটি ইয়েমেন উপকূলে নোঙর করে। কিন্তু এর একপর্যায়ে হুতি বিদ্রোহীরা জাহাজে থাকা মোট ২০ নাবিককে বন্দি করে ফেলে। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায়। বন্দি করার সময় বিদ্রোহীরা নিজেদের ইয়েমেনের কোস্টগার্ড সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছিল।

ইয়েমেনের একটি বন্দরে হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থান
ইয়েমেনের একটি বন্দরে হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থান

সেই থেকে মাসের পর মাস এই নাবিকেরা বন্দি ছিলেন হুতি বিদ্রোহীদের বন্দিশালায়। এই বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে জাহাজ কোম্পানির মালিকের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করে হুতিরা। পরে ওমানের সেই জাহাজ কোম্পানির মালিক মুক্তিপণের কিছু অর্থ পরিশোধ করার পর বন্দি নাবিকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়।

এদের মধ্যে বাংলাদেশি একজন নাবিক দুই মাস আগে হুতিদের বন্দিশালা থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে। এরপর শুরু হয় অন্য প্রচেষ্টা। মধ্যপ্রাচ্যের ওমান ও কুয়েত দূতাবাস তাদের মুক্ত করতে তৎপর হয়ে ওঠে। বন্দিদের মধ্যে যেহেতু ছিল ভারতীয় নাগরিকও, সে কারণে আফ্রিকার জিবুতির ভারতীয় দূতাবাসও এই প্রচেষ্টায় যোগ দেয়।

তাদের প্রায় দুই মাসের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০ বন্দিই মুক্ত হয়। ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে এই বন্দিরা এডেন শহরে যাবে শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর)। এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের পাঁচ নাবিকই আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার সহায়তায় ভারতের রাজধানী দিল্লি হয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে রাজনৈতিক সংকট। ২০১২ সালে গণঅভ্যুত্থানের কারণে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন দেশটির দীর্ঘদিনের একনায়ক আলি আবদুল্লাহ সালেহ। এরপর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন আবদুর রাব্বু মনসুর আল হাদি। কিন্তু সুন্নিপন্থী হাদির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হুতি বাহিনী। ২০১৫ সালে হুতিরা রাজধানী সানা দখল করে নিলে প্রেসিডেন্ট হাদি বন্দরনগরী এডেনে পালিয়ে যান। পরে তার সমর্থনে ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরু করে মার্কিন সমর্থিত সৌদি সামরিক জোট। টানা ৯ বছর রাজনৈতিক সংকটে ইয়েমেনজুড়ে চরম অরাজকতা চলছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!