হাসপাতাল কর্মীদের মারধর, ৪ মিনিটেই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস ৩১তম ব্যাচে আনিসুল করিম যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। সর্বশেষ বরিশাল মহানগর পুলিশে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালের কর্মচারীরা তাকে চিকিৎসার বদলে পিটিয়েই মেরে ফেললেন।

জানা গেছে, সোমবার (৯ নভেম্বর) সকালে তিনি রাজধানী আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে কর্মচারীরা তাঁকে পিছমোড়া হাত বেঁধে মারে। তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনায় পুলিশ হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসি ক্যামরার বর্ণনা দিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে ছয়জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এরপর নীল পোশাক পরা আরও দুজন কর্মচারী তাদের সাথে যুক্ত হয়ে তাঁর পা চেপে ধরেন। এ সময় দেখা যায় মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। চার মিনিট পর আনিসুলকে উপুড় করা হয়। তখনই তাঁর শরীর নিস্তেজ দেখা যায়।

আনিসুল করিমকে উপুড় করে একজন কর্মচারী তাঁর মুখে পানি ছিটান। সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী ওই কক্ষে প্রবেশ করেন এবং ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাদা অ্যাপ্রোন পরা ওই নারী ১৩ মিনিটের মাথায় আনিসুল করিমের বুকে পাম্প করেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ শুরু থেকে পাশে দাঁড়িয়ে এই ঘটনা দেখছিলেন।

পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বলা যাবে মৃত্যুর কারণ।

তার ভাই রেজাউল করিম বলেন, আনিসের উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের সমস্যা ছিল তবে তা প্রকট নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মানসিক সমস্যা দেখা দিলে আনিসুল করিমকে ১০ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসা করাতে আনা হয়। কিন্তু মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।

নিহত পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম এক সন্তানের জনক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm