হালিশহর আনন্দবাজার সংযোগ সড়ক যেন মরণফাঁদ, প্রাণ হাতে নিয়ে চলে মানুষ

চট্টগ্রামের হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় আউটার রিং রোডে ওঠার সংযোগ সড়কটি যেন ভোগান্তির আরেক নাম। বন্দর থানা এলাকার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড় হুজুরের বাড়ির পাশঘেষাঁ আধ কিলোমিটারের এই সড়কটি দিয়ে আউটার রিং রোডে ওঠা যায়। কিন্তু এই তিন মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে অনেক সময় এক ঘণ্টা লেগে যায়। খানাখন্দ, ধুলোবালি, ভোগান্তি—সবকিছু মিলে চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে সড়কটি।

প্রতিদিন ছোট গাড়ির সঙ্গে ভারী কার্ভাডভ্যান, ট্রাক, প্রাইমমুভার চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে এ সড়কটি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে রাতেরবেলা। বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় রাতের আঁধারে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় সড়কটিতে।

এছাড়া সড়কটি ওয়াসার হওয়াতে এখনও কাজ করতে পারছে না সিডিএ। সেইসঙ্গে ওয়াসাও অন্য আরেকটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এই সড়কের সংস্কার করবে না বলেও জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) সরজমিনে দেখা গেছে, সংযোগ সড়কটিতে হেলেদুলে চলছে বিভিন্ন গাড়ি। গত দু’বছর ধরে দৃশ্যমান পিচঢালাই (কার্পেটিং) সংস্কারকাজ না করায় তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এতে গাড়ি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। বিকালে সড়কের গর্তে পড়ে একটি কাভার্ডভ্যানের চাকা বিকল হলে যানজটের সৃষ্টি হয়।

অথচ যানজট থেকে বাঁচতে এবং হালিশহর, বড়পোল, আগ্রাবাদ, অলংকার, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেতে মানুষ এই সড়কটি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব গর্তের কারণে দু-তিন মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।

চট্টগ্রাম বন্দর ও বিভিন্ন ডিপোর কন্টেইনার লরি, প্রাইমমুভার, কাভার্ডভ্যান, ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী গাড়ি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে পতেঙ্গার ডিপোগুলোতে যায়। আবার ফৌজদারহাট থেকে শুরু করে সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য পৌঁছে দিতেও এই সড়কটি ব্যবহার করছে গাড়িচালকরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সালাউদ্দিন বাবর বলেন, ‘সংযোগ সড়ক ব্যবহারের অযোগ্য। গর্তে পড়ে অনেক সময় গাড়ির চাকা আটকে যায়। আবার একদিকে হেলে পড়লে সামনে ও পেছনে ক্ষতি হয় গাড়ির। আগে এই সড়কটি ব্যবহার করলেও বর্তমানে সড়কের যে বেহাল অবস্থা তাতে প্রাইভেট গাড়িগুলো অনেকটা পথ ঘুরে টোল রোড দিয়ে রিং রোডে উঠতে হয়।’

কাভার্ডভ্যান চালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। বড় বড় গর্ত থাকার কারণে গাড়ির চাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ক্ষতি হচ্ছে। রাতেরবেলা অন্ধকার এবং গর্তগুলোর জন্য যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে।’

চট্টগ্রামের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. কথক দাশ চাকরির সুবাদে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য বিমানবন্দর থেকে এই সড়ক দিয়েই আসা-যাওয়া করেন। তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে যেতে যত ধকল যায় তত ধকল ঢাকা থেকে আসতে হয় না। এই সড়কটি ভাঙা থাকায় এত সুন্দর রিং রোডের সুফল পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী।’

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও ফ্লাইওভার প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিডিএর আউটার রিং রোডের সংযোগ সড়কটি চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষের জায়গা। ওখানে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রকল্পের কাজ চলছে। রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে ওয়াসার সহযোগিতা না পেলে আমরা কাজ করতে পারবো না। ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন) মো. আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওয়াসার ট্রিটমেন্ট প্ল্যানিংয়ের কাজ চলমান থাকায় আপাতত রাস্তাটির উন্নয়ন কিংবা সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি না। আমরা সিডিএ, বন্দর ও সিটি কর্পোরেশন সঙ্গে সমন্বয় করে ওয়াসার ট্রিটমেন্ট প্ল্যানিংয়ের উত্তর পাশে বিকল্প আরেকটি সংযোগ সড়কের কথা চিন্তা করছি। আশা করছি, আগামী এক বছরের মধ্যে নতুন সড়কটি চালু হয়ে যাবে। বর্তমান সংযোগ সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করে দেবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!