হালিশহরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ৬ মাস ধরে ধর্ষণ ৩ যুবক মিলে, ৯ হাজারে মীমাংসার চেষ্টা

গর্ভবতী হওয়ার পর ‘বাবা’ হওয়ার দায় কেউ নিতে চায় না

১৪ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোরী কুয়াশা (ছদ্মনাম)। বাবা রিক্সাচালক, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে সংসারের চাকা ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। কুয়াশা খানিকটা ‘হাবাগোবা’ হওয়ায় তাকে ভাড়া বাসায় একা রেখে কাজে চলে যেতেন বাবা-মা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে তাকে দফায় দফায় ধর্ষণ করে আসছিল পাশের বাসায় থাকা প্রতিবেশী তিন যুবক মিলে। পরবর্তীতে কুয়াশা গর্ভবতী হলে তার মধ্যে শারীরিক পরিবর্তন দেখে একপর্যায়ে ঘটনার জানাজানি হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে বিস্তারিত ঘটনা।

তবে এরপর ধর্ষক ওই তিন যুবককে ধর্ষণের দায় থেকে রেহাই দিতে চলে আরেক নাটক। গণধর্ষণের এই ঘটনায় অপরাধের সাজা হিসেবে স্থানীয় সালিশে ওই তিন যুবককে ৩ হাজার করে মোট ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনজনই কথিত সেই ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে রাজি হলেও ১৪ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোরী কুয়াশার গর্ভে আসা অনাগত সন্তানের ভার নিতে রাজি নয় কেউই।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর হালিশহর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের আরজু বেকারি এলাকায়। প্রতিবন্ধী কুয়াশা জিজ্ঞাসাবাদে তার মা-বাবাকে জানায়, ওই তিন যুবক তাকে গত ৫-৬ মাস ধরে জোর করে নিয়মিত ধর্ষণ করে আসছিল। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হতো বলে জানায় কুয়াশা।

কিন্তু কুয়াশা গর্ভবতী হওয়ার পর ঘটনা জানাজানি হলে তাদের ভাড়া বাসার মালিককে জানানো হয় পুরো ঘটনা। বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে ওই বাড়িওয়ালা অভিযুক্ত তিন যুবককে নিয়ে একটি সালিশের আয়োজন করেন।

ধর্ষক এই তিন যুবকের একজন রিক্সাচালক মইনুদ্দীন মুন্না, আরেকজন ভ্যানচালক রেজাউল, অপর একজন হলেন সিএনজিচালক শাহজাহান। এদের তিনজনের বয়সই ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে।

বাড়িওয়ালা আনোয়ার হোসেনের ভাষায়, ‘যেহেতু ধর্ষক ও ধর্ষিতা উভয়ই তার ভাড়াটিয়া, সেজন্য নিজের মানসম্মানের ভয়ে আমি ঘটনাটি নিজেরা নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করি।’

বুধবার রাতের ওই ‘সালিশ বৈঠকে’ উপস্থিত ছিলেন— এমন একজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, প্রথম দিকে অভিযুক্ত তিনজনের প্রত্যেককে ৩ হাজার করে মোট ৯ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের একটি চুক্তি করা হয়। কিন্তু সালিশের বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে— এমন খবর পাওয়ার পর ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

বুধবার রাতে হালিশহরের বাসায় ‘সালিশ বৈঠক’ চলাকালেই বাড়িওয়ালা আনোয়ার হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি সালিশের বিষয়টি স্বীকার করেন এই প্রতিবেদকের কাছে। তবে ৯ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণে বিষয়টি মীমাংসা চেষ্টার কথা স্বীকার করেননি।

এ সময় ওই বাড়িওয়ালা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ধর্ষণের একটি ঘটনা শুনেছি। আমি ভুক্তভোগীর পরিবার ও অভিযুক্তদের নিয়ে বসেছি। এখনও সবার সাথে কথাবার্তা চলছে। কোনো সমাধান হলে আপনাকে জানাবো।’

এদিকে সালিশ বৈঠক ডেকে নিজেও ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় ওই রাতেই বাড়িওয়ালা আনোয়ার হোসেন হালিশহর থানার পুলিশকে ঘটনাটি জানান।

ঘটনা জেনে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত রিক্সাচালক মইনুদ্দীন মুন্না ও ভ্যানচালক রেজাউলকে আটক করে হালিশহর থানা পুলিশ। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আল-মামুন বলেন, ‘এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অপরাধে মামলা গঠন করা হয়েছে। আর কুয়াশা গর্ভবতী কিনা তা মেডিকেল রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত করে বলতে পারবো।’

অভিযুক্ত অপর একজন সিএনজিচালক শাহজাহানকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

হালিশহর থানায় এ ধরনের ভিকটিমকে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে প্রতিবন্ধী কিশোরী কুয়াশা ও তার মাকে ডবলমুরিং থানার সেইফ কাস্টডিতে রাখা হয়েছে। শনিবার (১৫ জানুয়ারি) কুয়াশার মেডিকেল পরীক্ষা না করানো পর্যন্ত তাকে ডবলমুরিং থানাতেই রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!