চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী মাস্টার লেনে রেলওয়ের উচ্ছেদ কর্মসূচির মাইকিং করা দুই রেলকর্মীর ওপর হামলায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য টমাস, বাহার, হ্দয়সহ অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা হলেও মামলায় নেই গ্যাং নেতা আলমের নাম।
অথচ অভিযোগ রয়েছে, সৃজনী মাঠের পাশে রেলের বিশাল জায়গা দখলকারী কিশোর গ্যাং নেতা সামশুল আলমের (৩৫) নির্দেশেই চলেছে এ হামলা। খুলশী থানায় দায়ের করা মামলায় (মামলা নং ২. ২(১১)১৯) তার নাম না থাকায় হতবাক হয়েছেন অনেকে।
জানা যায়, পাহাড়তলীর মাস্টার লেন সৃজনী মাঠের পাশে রেলের বিশাল জায়গা দখল করে সামশুল আলম প্রকাশ আলম নির্মাণ করেছেন ঘর ও বাগান। সেগুনবাগান এলাকায় রেলের জায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন আলমের ভাই। আলমের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে চলছে রেলের জায়গা দখল, বিক্রি, টেন্ডারবাজি, চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা। মাস্টার লেন, লোক কলোনি, আকবরশাহ, শহীদ লেন, পাঞ্জাবী লেন, স্ক্র্যাপ কলোনিজুড়ে চলছে তার অপরাধের রামরাজত্ব।
গার্মেন্টসকর্মী আলম (কথিত যুবলীগ নেতা) রেলের জায়গা দখল, বিক্রি ও টেন্ডারবাজি, কমিশন ব্যবসা, ইয়াবা বিক্রি, ছিনতাই ও ডাকাতির ভাগ প্রভৃতি নানা অপকর্মে জড়িয়ে এখন কোটিপতি।
আলমের হাতে মারুফ শিকদার, জিকু, মহানগর ছাত্রলীগ সদস্য সুমনসহ আরো বহু ঠিকাদারের লাঞ্ছিত হওয়ার প্রমাণ মেলে। এর মধ্যে ঠিকাদার মারুফ শিকদার ও সুমন খুলশী ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সুমনের মামলায় ৭ দিন কারাভোগও করেন আলম। আলমের কিশোর গ্যাংয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড মাসুদ প্রকাশ পানি মাসুদ গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়। অভিযোগ রয়েছে, আলম মাসুদের মামলাকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষকে হত্যামামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে আদায় করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
গত ২৯ জুলাই আকবরশাহ ময়নামাঠ সংলগ্ন বিভিন্ন দোকানপাটে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের অপকর্ম। জানুয়ারিতে যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল হত্যায় অংশ নেওয়া টেডিসহ ৩ খুনিকে নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখে আলম। ২২ আগস্ট শহীদ লেনে সাবেক পুলিশ কনস্টেবল সোহেল হত্যার চেষ্টায় তার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর ২৯, তাং ৩০(৮) ২০১৯। ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ বিট শহীদ মিনারের পাশে নিজাম স্টোর, ২ জুন আনোয়ারা স্টোরে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় গ্যাং সদস্য জক্কুকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করলে আলমের ইশারায় এ চুরির কথা ফাঁস হয়।
এ বিষয়ে জানতে আলমের মুঠোফোনে কল করা হলে পরিচয় জানার পর আলম একপর্যায়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
আলম চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের নাম বিক্রি করে এসব অপকর্ম করছেন— অক্টোবরে একটি অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মেয়র এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হোসেন হিরণের অনুসারী আলম— এমন প্রচার প্রসঙ্গে কাউন্সিলর হিরন বলেন, এ ধরনের কেউ আমার অনুসারী বলে আমার জানা নেই। আসলে অপকর্ম যারা করে একেক সময় একেক জনের নাম বিক্রি করা তাদের অভ্যাস।
রেলকর্মীর ওপর হামলা ও রেলের জায়গা উদ্ধার বিষয়ে পূর্ব রেলওয়ের ডিভিশনাল অফিসার (ডিআরএম) বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আশা করি, শীঘ্রই এদের গ্রেপ্তার ও তাদের দখলে থাকা ভূমি উদ্ধার করবে রেল কর্তৃপক্ষ।
জেএস/সিআর