রাত হলেই সৈকত এলাকার দোকানিদের টেবিল সাজানো হয় দেশি-বিদেশি মদের বোতল দিয়ে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে মদের আড্ডা। সৈকতজুড়ে গড়ে উঠেছে ২০টিরও বেশি কুঁড়েঘর। এসব ঘরের কক্ষে চলে ইয়াবা সেবন। এ যেন এক মাদকের রাজ্য। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকত এখন মাদক সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদকদ্রব্য। ইচ্ছে হলেই পাওয়া যাচ্ছে নামিদামি ব্রান্ডের বিদেশি মদ, বিয়ার ও ইয়াবা ট্যাবলেট। ঝাউ গাছের আড়ালে গড়ে উঠেছে মাদক স্পট। সেই সঙ্গে বেড়েছে অবৈধ কার্যকলাপও। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা সাধারণ পর্যটকরা এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীনও হচ্ছেন।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্র সৈকতের দোকানগুলোতে বসে সহজে সেবন করা যাচ্ছে মদ, বিয়ার ও ইয়াবা। একটু দাঁড়ালেই লোক এসে জিজ্ঞেস করে— মদ-বিয়ার-ইয়াবা লাগবে কিনা।
সকাল সাড়ে ১১ টায় সৈকতের উত্তর পাশে এক ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী নাছিমের চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করেন— ‘ভাই আপনাদের কিছু লাগবে কিনা’। কী আছে জিজ্ঞেস করলে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এখন ভদকা ও বিয়ার আছে। লাগলে নিতে পারেন। দাম পড়বে ৯০০ টাকা। ভেজাল নিলে ৮০০ টাকা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারকি সৈকতে গড়ে উঠা মদের দোকান, অসামাজিক কাজ ও ইয়াবা সেবনে ব্যবহৃত কুঁড়েঘরগুলো স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিলেও কয়েকদিন পর আবারও তৈরি হয়ে যায় এসব দোকান ও কুঁড়েঘর।
সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, স্থানীয়রা ছাড়াও দূরদুরান্ত থেকে আসা নানা বয়সী মাদকসেবী সমুদ্র সৈকত ও আশপাশের এলাকায় মদ-বিয়ার সেবন করে পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানি করছে।
সৈকতের এসব দোকানিদের কাছ থেকে গত (২৪ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার বিকেলে ভেজাল মদ খেয়ে পাঁচ পর্যটক অসুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার পর সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে কর্ণফুলী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সৈকতে গড়ে উঠা দোকানগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে এবং বিকালে পারকি রিসোর্ট হোটেল অ্যান্ড রেন্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে ৪ তরুণ-তরুণীকে আটক করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ্ আলম সুমন। তিনি বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আটক করেছি। তাদের থানায় এনে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বারশত ইউপি চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, ‘সৈকতে কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রি করার নিয়ম নেই। যারা এসব মদ বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এসব মদ খেয়ে অনেক যুবক প্রাণ হারাচ্ছে ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সৈকতের এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে-ধীরে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে পারকি।’
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিত চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। সৈকতে মাদক বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।’
এএইচ