হাটহাজারীতে বিল নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের চোর-পুলিশ খেলা

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার রেবতী মহাজনের বাড়ির বাসিন্দা ডা. বেনী মাধব শর্মা। গত জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিলের কপি হাতে পেয়ে তার চোখ ঠেকলো কপালে। বিলের শেষে মোট টাকার অংকের ঘরে কোনো সংখ্যাই উল্লেখ নেই। বিলের কপি ব্যাংকে নিয়ে গেলে বিল জমা দিতে পারেননি তিনি। আগস্ট মাসেও তার ঘরের বিদ্যুৎ বিলে কোন টাকার সংখ্যা উল্লেখ নেই।

হাটহাজারীর চিকনদন্ডীর ইউনিয়নের লালিয়ারহাট আজম চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা রাসেল চৌধুরী। প্রতিমাসে তার বিদ্যুৎ বিল থাকে ২০০ ইউনিটের মধ্যেই। কিন্তু গত জুলাই মাসের বিল ২০০ ইউনিট ছাড়িয়ে যায়। অথচ বিলে উল্লেখ করা রিডিংয়ের সঙ্গে মিটারের বর্তমান ব্যবহার করা ইউনিটের হিসেব তার মিলছে না। এই গড়মিল মিটাতে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তাকে হয়েছে শুধুই হয়রানির শিকার।

শুধু ডা. বেনী মাধব শর্মা কিংবা রাসেল চৌধুরীর সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেনি। হাটহাজারীর প্রায় ইউনিয়নেই বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চলছে নয়ছয়। অভিযোগ নিয়ে গেলেও মিলছে না প্রতিকার। সমাধানের জন্য গেলে একজন দেখিয়ে দিচ্ছেন অন্যজনকে। যেন চোর-পুলিশ খেলা।

মিটার না দেখেই বিদ্যুৎ বিল তৈরি করছে এই এলাকার মিটার রিডাররা। অভিযোগ দিলে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। দেওয়া হচ্ছে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও। অফিসে বসে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরি করায় গ্রাহক হয়রানি হচ্ছে চরমভাবে।

হাটহাজারীর আমান বাজার, লালিয়ারহাট, বড়দীঘির পাড়, শিকারপুর, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদ, নতুনপাড়া, খন্দকিয়া এলাকায় ভুতুরে বিলের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে হাটহাজারী বিদ্যুৎ বিভাগের সাব অফিস হিসেবে পরিচিত বড়দীঘির পাড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গেলে মিলছেনা কোন প্রতিকার। উল্টো অভিযোগ দিতে গিয়ে হয়রানি শিকার হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিভাগের মিটার রিডাররা প্রতিমাসে মিটার দেখে রিডিং লিখে তা অফিসে জমা দেন। কিন্তু গত কয়েকমাস মিটার রিডারদের দেখা মিলছেনা। তারা মিটার না দেখেই মনগড়া বিল ধরিয়ে দিচ্ছেন গ্রাহকদের। মিটার রিডারদের অবহেলায় অতিরিক্ত বিল কিংবা বিলের কপিতে মোটা অংকের উল্লেখ থাকায় গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

আমান বাজার এলাকায় মো. আরাফাত নামে এক মিটার রিডারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মিটার না দেখে বিল বানিয়ে দেওয়াসহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করলে গ্রাহকদের বিল আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয় উল্টো। ওই মিটার রিডার অভিযোগকারী বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

হাটহাজারী বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশশী মো. আবদুল কাদের বলেন, ‘হয়তো কোনো কোনো বিলের সমস্যা হয়েছে। বিলের কপি নিয়ে অফিসে আসলে তা দেখে বলতে পারবো। অফিসে আসলে বিল ঠিক করে দেওয়া হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!