হাইভোল্টেজ তারে দগ্ধ চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রীর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ এল হাইকোর্ট থেকে

পৌনে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন নয়— জবাব দিতে হবে ১১ জনকে

চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় বাসার ব্যালকনিতে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তারে জড়িয়ে হাত-পাসহ শরীরের বেশকিছু অংশ পুড়ে গিয়েছিল স্কুলছাত্রী ইশরাত জাহান জেনির। সেই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করতে গেলে থানা সেটা না নিয়ে শুধু একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিয়েই দায় সারে। গত ২৬ মার্চের সেই ঘটনার নয় মাস পর বিষয়টি জেনে পুরো ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে একটি কমিটি করে আগামী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেন সর্বোচ্চ এই আদালত।

একই সঙ্গে স্কুলছাত্রী জেনির পরিবারকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না— সেটা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রধান প্রকৌশলী চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) জেনির চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা দাবি করে পরিবারের পক্ষ রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার হামজার বাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান জেনির হাত-পা ও শরীরের অংশ পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২৬ নভেম্বর জেনির মা কাজি প্রিয়া আকতারের পক্ষে রিট করেন তাদের আইনজীবী। সেখানে চিকিৎসা খরচ ও ১২টি সার্জারি বাবদ এক কোটি ২০ লাখ টাকা, আগের চিকিৎসা খরচ বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং জেনির লেখা পড়া, বিয়ে এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

পাঁচলাইশ থানার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন শ্যামলী আবাসিক এলাকার পশ্চিম ষোলশহর ৯০৬/২-এ এবিসি হাইটসের তৃতীয় তলায় বসবাস করতো জেনির পরিবার। চলতি বছরের গত ২৬ মার্চ বিকেল তিনটার দিকে ব্যালকনিতে পরিত্যক্ত একটি পাইপ সরাতে গিয়ে পাশেই ১১ হাজার বোল্টেজের কারেন্ট লাইনের জড়িয়ে ইসরাত জাহান জেনির (১১) হাতের ডান হাতের কব্জি, বাম হাতের কনুই, বাম পায়ের পুরো পাতা এবং পেটের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এ ছাড়া পেট থেকে বাম উরু পর্যন্ত সম্পূর্ণ পুড়ে ঝলসে যায়।

মূমূর্ষ জেনিকে নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত বার্ন ইউনিটে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর মেয়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে ৯ এপ্রিল ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়। এরপর জেনির এক হাত ও এক পায়ের কিছু অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হয়। করা হয় আরও চারটি অপারেশন। এই চিকিৎসা করতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় তার পরিবারের। জেনির চিকিৎসা বাবদ সবমিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জেনির ঝলসানো ও পোড়া শরীরে আরও ১০ থেকে ১২টি অপারেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করতে গেলে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের (ডিসির) কাছে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোনো সাড়া মেলেনি। মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্নজনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেও লাভ হয়নি।

শেষপর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া জেনির পরিবার দুটি প্লাস্টিক সার্জারিসহ মেয়ের চিকিৎসা, লেখাপড়া, বিয়ে এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দিলেন আদালত।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!