হঠাৎ করেই পুনর্গঠিত হল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. অনুপম সেনকে পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। মোশাররফ এর আগে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন। অন্যদিকে সদস্য সচিব পদ থেকে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলকে সরিয়ে তার পরিবর্তে নগর আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিকেলে নগরীর কে সি দে রোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে এই বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৬-১৭ জন রয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা ড. অনুপম সেন ও এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল দুজনই মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘরানার নেতা হিসেবে পরিচিত। নগরের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নাছিরের সমর্থকরা। এই অবস্থায় নাছিরের অনুসারী এসব কাউন্সিলর প্রার্থীর অনেকে পরাজিত হওয়ার শঙ্কায়ও ভুগছিলেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে শেষ দিকে অনেকটা তদবির করে এই পরিবর্তনের বিষয়টা নিশ্চিত করেন মেয়র নাছির।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনকে। কো-চেয়ারম্যান হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হবেন।
তবে এই পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। দুপুর ২ টার দিকে এই পরিবর্তনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সার্কিট হাউজের বাইরে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের মাঝে। তারা বলছেন আচরণবিধির কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই মেয়র নাছিরের। সেক্ষেত্রে ঘরোয়াভাবে বসে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে তাকে। কিন্তু চসিকের মত গুরুত্বপূর্ণ একটা নির্বাচনে যদি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মাঠে যেতে না পারেন সেক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারণায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে মেয়র নাছির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ায় আচরণবিধি লঙ্গন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, উনি দায়িত্ব নিতে পারবেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। দায়িত্ব নিয়ে যদি সেটা ঘরোয়াভাবে পালন করেন তাহলে কোন বাধা নেই।
প্রসঙ্গত গত ১ মার্চ নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. অনুপম সেনকে চেয়ারম্যান এবং নগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
এআরটি/সিপি