হঠাৎ বাড়ছে করোনা— চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ১৮১ পজিটিভ, ৯০ দিনে এটিই সর্বোচ্চ

হঠাৎ বেড়েছে চট্টগ্রামে করোনার পজিটিভ শনাক্ত। একদিনেই একলাফে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় তিনগুন। পাশাপাশি করোনা বদলাচ্ছে তার পুরনো রূপ—মানবদেহে দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ।

হঠাৎ বমির ভাব, ডায়রিয়া, আমাশয়, স্পাইলাল কর্ডের প্রচন্ড ব্যথাকেও করোনার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা। সম্প্রতি সময়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের শরীরে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথার সঙ্গে এমন উপসর্গের দেখা মিলছে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। করোনার এমন নতুন রূপ খোদ চিকিৎসকদেরও ভাবিয়ে তুলেছে।

গত আগস্ট মাসে এসে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা পজিটিভ রোগীদের জন্য কিছু সংখ্যক কেবিন চালু রেখে জেনারেল ওয়ার্ড বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে করোনা পজিটিভ সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক করোনার জেনারেল ওয়ার্ড আবারও চালু করেছে।

একটানা ছয় দিন চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত ছিল একশর ওপরে। মাঝখানে আগেরদিন এটি নেমে এসেছিল ৬৩-তে। সেটিতে যতটুকু সুখবর মনে হয়েছিল সেটি নিভে যায় ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে। উল্টো শনাক্ত বেড়ে দাঁড়ায় ১৮১-তে। যা চট্টগ্রামে গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর মধ্যে ১৬৯ জনই নগরের বাসিন্দা। বাকি ১২ জন চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার। তবে শনাক্ত বাড়লেও এই সময়ের মধ্যে নতুনভাবে কেউ মারা যাননি।

এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট করোনা শনাক্ত রোগী এখন ২২ হাজার ৭২৬ জন। এদের মধ্যে নগরের রোগী ১৬ হাজার ৮৭৯ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা পাঁচ হাজার ৮৪৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৩১০ জন, যাদের ২১৬ জন নগরের এবং ৯৪ জন উপজেলার। অন্যদিকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ১৮১ জন।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি নয়টি ল্যাবে এক হাজার ৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮১ জনের দেহে। এদের মধ্যে ১৬৯ জন নগরের এবং ১২ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে কেউ মারা যাননি।

সিভিল সার্জনের তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের প্রধান করোনা পরীক্ষাগার ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-তে বিদেশগামীদের বাধ্যতামূলক করানো টেস্টসহ ২৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। তাতে করোনা শনাক্ত হয় ১৪ জনের দেহে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ জনের নমুনাপরীক্ষা করে ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করোনা করা হয়। তাতে করোনা শনাক্ত হয় দিনের সর্বোচ্চ ৯৩ জনের দেহে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত পাওয়া যায়।

নগরের বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবেও গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে করোনার জীবাণু পাওয়া যায় ২৬ জনের দেহে।

চট্টগ্রামের আরেকটি বেসরকারি করোনা পরীক্ষাগার শেভরণ ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জনের করোনা পরীক্ষা করে ১০ জন করোনা শনাক্ত হন।

চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে নতুন যুক্ত হওয়া করোনার আরেকটি পরীক্ষাগার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তাতে করোনা রোগী পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল রিজিওন্যাল টিউবারকুলোসিস র‌্যাফারেল ল্যাবরেটরিতেও (আরটিআরএল) ২৪ ঘণ্টায় ৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে সবকটিতে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

উপজেলা পর্যায়ে নতুন শনাক্ত ১২ জনের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সিভিল সার্জনের দেয়া রিপোর্টে ছিল না।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!