হঠাৎ ফ্রিজ ভাঙার গুজব চট্টগ্রামজুড়ে, প্রশাসন বলছে ‘মিথ্যা রটনা’

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যার নুরজাহান বেগম। ফ্রিজের মাছ মাংস নিয়ে বিপাকে পড়ে প্রতিবেশীর ফ্রিজে রাখতে গিয়ে পড়লেন সংকটে। যার কাছে যান সেই ফ্রিজ খালি করতে ব্যস্ত! সবার একই কথা— পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ফ্রিজ চেক করে অতিরিক্ত জিনিস পেলে ফ্রিজ ভেঙ্গে দিচ্ছেন।

হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের মুনিয়াপাড়ার মামুন উদ্দিন পিয়ারু। তার ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দেন সোমবার (২৩ মার্চ) সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে । এতে তিনি লিখেন, ‘আমাদের এলাকার পূর্ব পার্শে ফ্রিজে মজুদ পণ্য রাখার কারণে ফ্রিজ ভেঙে দিয়েছে। সবাই অতিরিক্ত পণ্য মজুদ থেকে সাবধান। ফ্রিজ যেমন ভেঙ্গেছেন তেমন দুই মাসের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করে দেওয়া সময়ের দাবি।’ মুহুর্তেই এ গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে গোটা হাটহাজারী।

এই দৃশ্য শুধু কর্ণফুলী কিংবা হাটহাজারী উপজেলায় নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, পটিয়া, উত্তর চট্টগ্রামে হাটহাজারী, ফটিকছড়িসহ পুরো চট্টগ্রাম জেলার চিত্র।

এ গুজবের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ফ্রিজের খাবার পেলেই ফেলে দেওয়া হচ্ছে- এমন গুজব ছড়িয়েছে কেউ কেউ। এসব গুজবের বিষয় প্রশাসনের শক্ত অবস্থান রয়েছে। আমি অনুরোধ করবো কেউ যেন কোন প্রকার গুজবে বিভ্রান্ত না হয়। জনসাধারণকে বুঝতে হবে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় জনস্বার্থে, মানুষের সম্পদ হানির জন্য নয়। গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, মঙ্গলবার বেশ কয়েকজন ফোনে জানতে চান আমরা কোথাও কোন ফ্রিজ ভেঙ্গেছি কিনা। আমরা জানিয়েছি, প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও কোথাও সম্পদ নষ্ট করার নজির নেই। ফ্রিজ ভাঙ্গার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।

লোহাগাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জানতে চেয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা থানার কোন টিম কারো ফ্রিজ ভেঙ্গেছে কিনা। লোহাগাড়া থানা পুলিশ কোন নাগরিকের বাড়িতে ফ্রিজ তল্লাশিতে যায়নি। এই সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া গেলে পুলিশকে অবগত করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এদিকে হাটহাজারীতে গুজবের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানার পর মিথ্যা গুজব সৃষ্টিকারী মামুনকে ধরিয়ে দিতে নিজের ফেসবুক থেকে একটি পোস্ট দেন। এরপর মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকেল ৩ টায় উপজেলা প্রশাসন অফিসে এসে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চান মামুন। পরে তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘সকাল থেকে বাজার মনিটরিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এর মাঝে একজন ফোনে জানাল আমি নাকি অভিযান চালিয়ে ফ্রিজ ভাঙ্গছি। পরে আমি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করলে মামুন নিজে এসে ধরা দিয়ে ক্ষমা চান। পরে তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

সিএম/এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!